অমিত পাটোয়ারীর গুচ্ছ কবিতা



ব্যাঘ্রচন্ডী, আইসো সকালে। সুতীব্র অনল পথে...  
এখনো বলোনি কেন বৃক্ষদানবেরে, সঙ্গী তাঁরে চাও? 
কালোপ্রিয়, শৈশবালোক চির অভিলাষী! 
প্রতিমুখ দেখে মেহেরবান, সমঅন্তে বাক্য একই; 
ভুল রেখে কেন ফিরে আসো? 
আমূল বদলে যাওয়া এ ভূলোক বেড়াহীন রাখি আজ, 
তুমিমুগ্ধ প্রাণ এসে খেতে পাক। 
তোমার অসুখ নিয়ে তাদের ভ্রমণ বুঝি
এইবার চন্দ্রপথ হবে! 
আমি হাঁটি। মাটি নেই, বায়ু নেই, জল... 

রোদ মেখে যে যুবক আকাশ খুলেছ, চেনা মুখ; 
তুমি যে দান করেছ ওরে, অমৃতকণা—  কৃতজ্ঞ আমি,
তোমার দেবতারে নিজমাংসে ভোগ দিতে চাই।  


পথ নেই আর কোনও, ফিরে যাওয়া...   
তোমারে না লেখা দিন পৃথিবীতে কেমন ঘনাবে, সে কথা 
আশ্চর্য ধবল ফড়িং! জন্মসময় নুলো; জন্মের
কবজি থেকে একটি কাটা হাত ঝুলে আছে
                                  ... আঙুল চ্ছিন্ন হওয়া অন্য হাত
আগের ঔরস আমার, ইতিপূর্ব ঈশ্বর— 
এ সমস্ত ফেলে রেখে শিশুসঙ্গ, রমণীপথ তবু! 
যে দ্রোণ শীতল, সে কন্ঠী অনীহাই দেবে। 
হা শস্য হা শস্য 
এখন আসক্ত চাই। আবাদ করুক মোহনাকাঙ্ক্ষী; 
আমি নই, অসম্ভব এ ক্ষীণায়ু শরীরে। 
কানাপশু রাতের বাজারে কেন ক্ষীণ! 

সুফি ভ্রমর ছিল দেহে, নাওনি। ফিরিয়ে দিয়েছ।   

          
হা হরি, কী মাগগি এ দুনিয়া রে! বোকাচন্দ! 
স্বপ্ন দেখি যদি, নাড়িভুড়ি, পেট চিরে সব ছিনায় লয়ে
কই যায় স্থলচর? মরে কোনও লাভ নাই, 
জ্যান্ত লাভ নাই...  শুকপাখি তো থম অচল জলযানে! 
জঙ্গলে বাঁচো...  কথা বলো... 
... জীয়ন্ত কথা। আহ! জয়লাভ রক্ষকুলে!  
আমিও বিজিত হে হরি, গৌতমী অশ্বত্থের ডাল,
অরিত্র হে... 
                          পুনরাধুনিক! পুনরাধুনিক!

আপনারে ভালোবাসা, চড়ুই সে তো; 
চড়ুই, তোরে তুমি দিতে আকাঙ্ক্ষা করি রাত্রিজলে। 

      
৪              
বাসন্তীপূজার রাত, শেষ রাত হবে, তুমি জানো।    
দীনের পূজা গ্রহণ করো দেবী। পথিক মহারাজ প্রণামান্তে
চলে যান অন্যপথে। খাদ্য কত, তবু যে অভুক্ত তিনি...
কাঠবেড়ালি কেমন ক’রে খায়,
সমস্তদিন দেখি, জলের আলো পাতায় খেলা করে—
বুড়িবাসন্তী খেলা! দোসর হব না ব’লে
মায়াফুল দিয়ে ওরে ভুলাতে চাই আমি, এই কথা
জলের তরল এখন। রোদ পড়ে, বিদেশী লোকের 
ফেলে যাওয়া মাথার ফেজ় তুলে মুখ ঢাকি।  

জল্লাদ, অমন কাকভোরে কালো কাপড় কেন আনো? 
ফাঁসিমঞ্চে ঐ কি জীবিত কারও হেঁটে যাওয়া!  


যেন ফিরে আসি; ফিরে আসা অসহজ, কে না জানে!  
বন্ধু জেগে আছে সমস্ত রাত, কী বলি? এত কথা...
শাকের চুবড়ি ভরা বুড়িমা’র 
                        ... রৌদ্রে রৌদ্রে হাঁটা। একাকী  
দাঁড়াও, দাঁড়িয়ে যাও ক্ষণিক— 
কেমন নূপুর প’রে ঠকঠকি পার হচ্ছে পথ, দ্যাখোনি?  

স্তব্ধ তোমার চেয়ে থাকা, মিথ্যেঈগলসুন্দর। ঐ 
আমার অনুলিপি নিয়ে কী হবে তোমার? কারুমতিখেলা?    

©  অমিত পাটোয়ারী 

অঙ্কন : শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়



Comments

Popular posts from this blog

অনিন্দ্য সরকারের গুচ্ছ কবিতা : গান ছুঁয়ে ছুঁয়ে

অয়ন হালদারের পাঁচটি কবিতা

মুন্নী সেনের গুচ্ছ কবিতা : সম্বোধন