Posts

Showing posts from August, 2022

কবিতা-বিরোধী ফতোয়া ও বিরুদ্ধ-ফতোয়া : তন্ময় ভট্টাচার্য

Image
  কবিতা-বিরোধী ফতোয়া ও বিরুদ্ধ-ফতোয়া সংবাদমাধ্যমে বা অন্যত্র মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে— ‘অনুভূতিতে আঘাত লাগায় অমুকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের।’ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ব্যক্তিগত নয়; সর্বজনীন কোনো-কিছু নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ। মনে পড়ে ‘অনুভূতি’ শব্দটার বিকৃত রূপ ও বন্ধুদের হাসিঠাট্টাগুলো। আর এই আঘাত— কীভাবে এসে লাগে? কথায়-কথায় এত আহত হন কেন সকলে? ইয়ার্কি ছেড়ে কাজের কথায় ফিরি। ধর্ম বা যৌনতা নিয়ে অনুভূতিতে আঘাত ও তা নিয়ে মামলা দায়ের এখন এ-দেশে জলভাত। রোজই কোনো-না-কোনো বিষয় নিয়ে এসব ঘটেই চলেছে। ভাগ্যের বিষয়, বাংলা কবিতার দিকে তেমন অভিযোগ খুব একটা ধেয়ে আসেনি। আসেনি কি? সাম্প্রতিক অতীতে শ্রীজাত-র একটি কবিতা নিয়ে আক্রোশ-আক্রমণ দেখেছি আমরা অনেকেই। মাসকয়েক আগে বাংলাদেশে সরকারি কর্মী হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কবিতা লেখায় চাকরি খোয়াতে হয়েছে রহমান হেনরীকে। গত অর্ধশতাব্দীতে বাংলাদেশে উদাহরণ হিসেবে পাব দাউদ হায়দারকে, কবিতায় ‘ধর্মীয় অনুভূতি’কে আঘাত দেওয়ার অপরাধে যিনি দেশছাড়া। আরেকটু পিছিয়ে গেলে হাংরি জেনারেশন— বিশেষত মলয় রায়চৌধুরী। এগুলো তাও বৃহৎ-আলোচিত বিষয়, যা প্রশাসন অবধি গড়িয়েছে। এর বাইরেও কত কবিতার উদাহরণ অতীতে

চারটি কবিতা : সংবেদন চক্রবর্তী

Image
প্রতিটি চেয়ার কথা বলে      প্রতিটি চেয়ার কথা বলে চেয়ারেরা কথা বলে চেয়ারেরা কথা শোনে প্রতিটি চেয়ার কথা শোনে তার উপরের তার উপরের তার উপরের আত্মতুষ্টি লেখা হয় আহাম্মক দেশাত্ম টেবিলে সমস্ত মানুষ জানে কোনখানে কার শিরদাঁড়া সেগুন শিরীষ এক জীবনে কিছুই জানল না। -----------------------------------------------  হালচাল    চাঁদের উপমা চাঁদ, ডুবে যায় গভীর জঙ্গলে সংজ্ঞাহীন অপরাধ মাত্রা ছাড়ায় কক্ষপথ ঘুরে নতুন শহর ঢেউ তোলে কোমর দুলিয়ে যায় ধানের জমিতে কান্না কান্না গান বারুদের স্তুপ কোথায় দাঁড়াব বলো? মিলেমিশে যায় রক্ত স্রোত পাখিরা ডাকে না আর স্নেহাতুর আদরের গান ধীরে ধীরে তৈরি হয় উৎসুক জনতার ক্রোধ জন্ম ছোট হয়ে আসে বয়সের কথা ভাবলেই। ---------------------------------------------- একটি সূর্যাস্তের গল্প দু'কলম ছেলেটি লিখতে চেয়েছিল ভীষণ বাঁধানো এক সূর্যাস্তের গল্প তারপর সূর্য উঠল সূর্য ডুবল, পশ্চিমআকাশে অশ্বত্থ গাছের পাশে সুজাতার সূর্যমুখী বাড়ি বেশ স্পষ্ট প্রতিবিম্ব ছেলেটির ভেঙে পড়া ঘরে বাড়িতে বিধবা মা ও তাদের সাধের ঘরখানি  সান্ধ্যকালে ঘর থেকে দুটো ছুঁচো ফিরে যায়       

ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ — পর্ব ২ : জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

Image
ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ -- ২য় পর্ব  ‘অপ্রতিমদা কোথায়?’ কৃষাণুর গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকাল টায়রা। বার্বিকিউয়ের এখানে একেবারে জমে উঠেছিল আড্ডাটা। ককটেল, মকটেল, বিয়ার ঘুরছে হাতে হাতে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শীত নামছে বলে কেউ কেউ স্ট্রোলটা জড়িয়ে বা মাথায় হুডি টেনে কলেজ জীবনে ফিরে যেতে চাইছে। দুজন অভিনেত্রীর একেবারে  অপ্রত্যাশিত ভাবে অন্য কাউকে বিয়ে করে নেওয়ার প্রসঙ্গে টায়রার নিজস্ব মত প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানানোর প্রয়াসটা থমকে গেল কৃষাণুর ডাক শুনে। ওকে দেখে মনে হচ্ছিল বলবে ‘আমি কী করে জানব!’ সঙ্গে সঙ্গে মুখ খুললে হয়ত তাই-ই বলে ফেলত। কিন্তু দু সেকেন্ড থমকে চেয়ে রইল, যেন ঠিক বুঝতে পারেনি প্রশ্নটা। ওর চোখে প্রশ্ন দেখে কৃষাণু আবার জিজ্ঞেস করল, ‘অপ্রতিমদা কোথায় গেল? দেখেছিস?’। ততক্ষণে দলের অন্যরা কৃষাণুর দিকে তাকিয়ে, প্রশ্নটা সকলেই বুঝতে পেরেছে। টায়রাকে জিজ্ঞেস করার কারণটাও… কেউ কেউ। প্রত্যুষ হাসি চাপার জন্য অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বিয়ারের বোতল মুখে নিল। রাগিনী ইচ্ছে করেই রিপিট করল প্রশ্নটা ‘কাঁহা গ্যায় অপ্রতিম স্যার! তেরে সাথ হি তো থে?!’ টায়রা ওর দিকে তাকাল না, উঠ

শিরোনামহীন চারটি কবিতা : অয়ন চৌধুরী

Image
শিরোনামহীন চারটি কবিতা ১. টিভিতে নতুন ফ্লাইওভার উদ্বোধনের  খবর দেখলে বড়ো ভয় করে।  তোমাকে আমার এখানে নিয়ে আসবো নতজানু বটগাছটির কাছে দুব্বো ঘাসের আলোয় চড়ুই-এর মধ্যাহ্নভোজনে বিরহিনী সন্ধ্যার শিহরণে। এখানে বড়ো বড়ো ফ্লাইওভার নেই তোমার গায়ে শিশুর গন্ধ কেড়ে নেবার ভয় নেই তোমার কথার কুঁড়েঘর গিলে ফেলার ভয় নেই এসো এই সৌহার্দের ঝর্ণার কাছে বসো আমার পাশে, এই চিরকালীন স্নেহগন্ধি সাঁকোর উপর। ২. সেদিন তাকে দেখেছিলাম  অল্প আলোর লুকোচুরিতে, শেষ বিকেলে। বৃষ্টি ফোঁটার হিম জড়িয়েছিল তাকে, আমার চোখে বিদ্যুতের ঝলকানি। তার স্নিগ্ধ হাত আমার কপালে, শান্ত নদীর মত তাঁর হেঁটে যাওয়া  কোনো এক ভিড়ের সমুদ্রে। তারপর বহু গল্পের উপকথায় তাকে খুঁজেছি  অনেক ধোঁয়া ধোঁয়া গোধূলির অরণ্যে, কত রোদ্দুরে ওড়া ফড়িংয়ের ডানায়  কিংবা যুবকের সোনালী ঘুমের নীল স্বপ্নের ওপারে এই কল্পনায় তার শাড়ি, আঁচলের গন্ধ লেগে আছে। তার গল্পের রূপক হয়ে আবার  ফিরে যাই কোনো এক আষাঢ়ের বিকেলে। ৩. হঠাৎ করে যাবতীয় কবিতা পালিয়ে যেতে চাইলে তাকে টুকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করি এই রুগ্ন ভালোবাসা ঘুমিয়ে যায় জেগে থাকে অন্তমিলের  হলু

অয়ন হালদারের পাঁচটি কবিতা

Image
বিষণ্ণ ফুলের জার্নাল নীল মাটির শ্বাস ছুঁয়েছে যে রামধনু তার সমর্পিত দৃষ্টি আজ রঙিন স্রোত যেন সদ্য বেড়ে ওঠা বনফুল সে হারিয়ে যাবে বিভুঁই… এসব হিসেব কষতে কষতে ঘুমিয়ে পড়ি আনমনে উঠে দেখি আমার টেবিলে ছড়ানো রক্তশূন্য থিসিস ভ্রান্তি যতদূর যাই ষড়যন্ত্রী ডোলড্রাম থিতিয়ে রাখে বলে, ওই দ্যাখ তোর চোখে বিঁধে আছে ছদ্মবেশী মাটি শৃঙ্খল শ্রান্ত উপত্যকায় ঢলে পড়ে বিনুনি তোমার জানি পাল্টে যাবে দুটি শ্বাপদের ইচ্ছে শৃঙ্খলে মিশে যাবে চাঁদের কলঙ্ক কবি ভেসে ওঠে মেঘের এস্রাজ। কণ্ঠ নীর। জীবন এরকমই। মলিনযাপন ও স্থাপত্যহাসি বহন করে যে  নদী,তাকে ছেড়ে দিও না। জেনো, নিভৃতকুঠির ভেঙে বয়ে চলা কবিতা সে। সে জানে, মেঘ কতটা কান্না বইতে পারে বিয়োগবিধুর মেয়ের মত। আমাদের বাড়ি নেই। তাসের জানালা আসে শুধু। যা দিয়ে প্রবাহমান জোনাকি উঁকি দ্যায়। দ্যাখে ভাস্কর’এর শব্দের কংক্রিট। ভয়ংকর কাগজের স্নেহ সাহসী সুতোর বংশধর ঢলে পড়ে আবহমান ধারার বুকে দ্যাখো  গোধূলিমাখা রাখালের সখা আমাদের পথের শেষ নেই সিমাহীন সে উড়ে আসে চণ্ডালের স্নেহ ভয় পেও না জানি তৃষ্ণায় জ্বলছে তোমার কণ্ঠ  গান গাও আর উড়িয়ে দাও  চাদরে মোড়া মাংসপিণ্ড  © অয়ন হালদার অঙ

ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ — পর্ব ১ : জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

Image
ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ : পর্ব ১ - আসলে কী জানো? আমি সেই সব মানুষের দলে… যারা নিজস্ব জগতে, কল্পনার উষ্ণতায় বাঁচে। - যেমন? - যেমন… কেউ হয়ত এমনিই কথা বলছে না, বা ইচ্ছে করেই কথা বলতে চাইছে না… আমি ভেবে নিলাম, সে অভিমান করে আছে। - - যা নেই, তা আগলে রাখা, তার প্রতিকার, তার নিরাময়, তার জন্য দুশ্চিন্তা… এইসব করতে করতেই অর্ধেক জীবন চলে গেল। - দুঃখ হয়? - হয়… আমার মনে হত, আমার অভিমানও সে বুঝবে, সেও চেষ্টা করবে আমার অভিমান ভাঙাতে। একের পর এক ‘সে’ চলে গেছে… আর আমি দেবব্রত বিশ্বাসের গাওয়া গান হয়ে গেছি। - অদ্ভুত লাগছে… - কী? এই কথাগুলো? না আমি এইসব বলছি বলে? - দুটোই। আপনাকে সারাদিন অন্য সময়ে যারা দেখে… মানে, আমিও বুঝতে পারতাম না কখনো। - বিয়ার আর হুইস্কির ককটেলে এসব বলাচ্ছে ভেবে নাও… কাল সকালে দুটো এস্কালেশন ইমেইল এমন পাঠাব… আর এসব মাথায় থাকবে না। - হা হা হা… পারেনও আপনি… সত্যি! - আই অ্যাম সিরিয়াস! ক্রাইসিস, পার্সনাল গ্রাজ, গ্রিভান্স, বিট্রেয়াল, ফেলিওর… খুব শক্তিশালী হলাহলের মত। এমন একাকীত্বে কথা বলা বা শোনা… নরম অনুভূতিগুলো অসাড় করে দিতে পারে, একজনের প্রতি আর একজনের ফিলিংস এমনভাবে রোস্ট ক

অর্কপ্রভ ভট্টাচার্যের দুটি কবিতা

Image
১৪ই মার্চ (১) যাবতীয় তুচ্ছতাচ্ছিল্য একটা ১৪ই মার্চের বিনিময়ে ভুলে যেতে চাই কোনো এক ১৪ই মার্চে যদি কবিতা লেখা ভুলে যাই যেমন ভুলে গেছি এই ১৪ই মার্চে চমৎকার বকবকম করে যাওয়ার রীতি; সেক্ষেত্রে নিশ্চয়ই আবার কবিতার ক,খ দিয়ে শুরু করব কিনা বা সেটুকুর সম্ভবনা কতটা বরং তার চেয়েও হয়তো সেই ১৪ই মার্চে হয়ে উঠব সুদক্ষ চাষী। মাননীয় শ্রোতাগণ,  যদি শুধুমাত্র ১৪ ই মার্চগুলোকে যোগ ক'রে ফেলতে পারেন আপনারা পেতে পারেন আকর্ষণীয় উপহার (২) কিন্তু কোনো এক দুর্বোধ্য কারণে ১৪ ই মার্চ এলে ক্রমশ রোগা হতে থাকি। একটা ১৪ই মার্চ থেকে অন্য আরেক ১৪ই মার্চের দূরত্ব শুধুমাত্র ৩৬৫ দিনের নয়, কেননা আরেকটা ১৪ ই মার্চ পেরোতে পাঁচ লক্ষ সত্তর হাজার টাকার খরচসাপেক্ষ। তার মধ্যে এসে গেছে ব্যয়বহুল জুলাই , অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাস। ১৩ ই মার্চের রাত্রি আর ১৪ ই মার্চের রাত্রি প্রায় একই, একটা কবিতা লেখার ব্যবধান মাত্র। (৩) এমনই মেঘভাঙা দিনে নয় বছর বয়সে কী করেছি, সতেরো-আঠারো বয়সে কী ভেবেছি - জানতে ইচ্ছে করে। আরও জানতে চাই, চল্লিশ বছরে বসে কী ভাবব। ভাবব এই দিনগুলো সোনার থেকেও সস্তা আর জলের থেকেও দামী ছিল। আ

জেম সাহার গুচ্ছ কবিতা : পঙ্গু কবিতা

Image
পঙ্গু কবিতা  ১ রুটির কাছে নত করি মাথা  কাছে পেতে চাই আর দূরে গ্রামে শুয়ে থাকি  আলাপ মানেই প্রলোভন তাই  কাকতাড়ুয়ার সংলাপ প্রিয় মনে হয়  প্রকৃতি অনেক আগেই ছিন্ন হয়েছে  তাদের মাঝে আচমকাই ভেদক হয়ে শুই  যেভাবে সমস্ত তাপ সংগ্রহ করে শুয়ে থাকে নীল কাক ২ সংকেত বুঝিনি এতদিন প্রলাপে থিতু হই  ব্যবহার ইত্যাদি শরীরের অন্তর্বর্তী মুদ্রায় এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড়ায় না,  যাত্রীদের যতটা হিংসে করি ততই দ্রুত পার হয়ে যায় একের পর এক প্ল্যাটফর্ম  ছোটো শিশু বাটি হাতে আরও দ্রুত এগিয়ে আসে, কামড়ায়  প্রত্যেকটি কামড়ে ক্যানাইন অক্ষর ছেপে যায়। ছাপাখানার ভূত আমায় সম্পৃক্ত করো  নিরলস যৌনতায়  সংকেত বুঝিনি, বুঝিনি কাকে বলে হিরন্যজল  আমরা কেবল নারী বলতে বুঝি অ্যানাটমি, আরও দ্রুত এগিয়ে যাই মাইন ছড়াতে ছড়াতে... ফিমারের বাঁক জুড়ে যে জাতীয় সড়ক যায় তার দুপাশে পুঁতে রাখি ডিনামাইট  তুমি এসব গূঢ় সংকেত অবলীলায় পার করে যাও... আমি জানি অত সহজ নয়। ৩ বিদ্যুতের পরিবাহিতা সবচেয়ে বেশি কবিতায় আঙুলের নখ উপড়ে ধরেন কবি, টানটান আর দেখান, জিরাফ ছাড়া কিছুই নেই সেখানে ধুধু মাঠ - ঘাট - ক্ষেত লেপ্টে এই গবাদ