Posts

Showing posts from September, 2022

সুমন সাধুর গুচ্ছ কবিতা

Image
কমরেডের আজ দারুণ জ্বর কমরেডের আজ দারুণ জ্বর ইতিহাসের পৃষ্ঠা ওল্টাতে ওল্টাতে দুপুর গড়িয়ে যায় একটা আলুর খোসা ছাড়িয়ে চারটুকরো করা গেল পাশে কাঁহাতক পেঁয়াজের ঝাঁঝ জ্বরের শরীরে হার্ট চলে দ্রুত গতিতে আর দুপুরের অবশ্যম্ভাবী মাস্টারবেশনের পর একটা সিগারেট ধোঁয়া উড়িয়ে বিদ্যুৎ চমকে ওঠে স্নায়ুতে এতকিছু দেখার পর বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবি কমরেডকে আমি সমর্থন করি না ঘৃণা করি না বরং পরখ করি, যাচাই করি যেভাবে দুই আর দুইয়ের বিয়োগে নির্মিত হয় অদ্ভুত গোলাকার তাকে তীব্রভাবে শূন্যতার দিকে ঠেলে দিই ক্ষণজন্মা যুদ্ধের চারপাশ বড়ো একা পৃথিবী জুড়ে ওড়ে ছাই আগুনের দেখি কী ভীষণ আস্পর্ধা কিশোরীর রক্তে মাছি ভনভন ভনভন আগুন বেড়ে ওঠে গুম মেরে যাওয়া কান্নায় ঝড়েদের যুদ্ধ থাকে না আর উড়ে আসে থকথকে মাটি এই মাটিতেই কঙ্কালসার, ক্ষণজন্মা পৃথিবী যার এক হাতে গোলাপ, আরেক হাতে ধানদুব্বো উপসংহার অধ্যায়ের মাঝখানে জ্বর আসে জ্বরের অস্তিত্ব সোম থেকে শনি — রোববার ছুটির দিন সে আসে না৷ যন্ত্রণা আসে। গালে, ঠোঁটে, বুকে, নাভিতে। জ্বরের ঘোরে শুনি পাড়ার ট্যাপ কল খুলে যাওয়ার চিৎকার। একদিন জল থেমে যায়, ফোঁটা ফোঁটা কপালে পড়ে, অথচ জ্বর— আসছে ত

আনন্দী চট্টোপাধ্যায়ের দুটি কবিতা

Image
‌চিরহরিৎ  দূর থেকে লক্ষ্য করছি অনেক হারিয়ে যাওয়া আর ফিরে আসার স্মৃতি। মুখবিহীন অজস্র ঝুঁকে-পড়া মানুষ হেঁটে যাচ্ছে, আর রাস্তার মাঝখানে গজিয়ে উঠেছে একটা ফুলগাছ। তুমিও একদিন আমাকে শিখিয়েছিলে, মুঠোয় ধরতে গেলেই ঝরে যায় বালি। এখন পায়ের পাতায়, আর সবুজ শিকড়ে জমা হচ্ছে লাল মাটি, কাঁকর, ধুলো। ফুলগাছের একটা ডাল দেওয়াল ভেদ করে ঢুকে পড়েছে আমার ঘরে, প্রতিদিন একটু একটু করে জড়িয়ে যাচ্ছে চামড়ায়, হাড়ে। চামড়ার ভিতরে সবুজ শিরা ক্রমে স্পষ্ট হয়ে আসছে, টের পাচ্ছি বৃষ্টি ভেজার বাসনা, রোদ গিলে ফেলার ইচ্ছে। খুঁটে তুলছি দেওয়ালের রং, একটা একটা করে ইঁট। নখ ভেঙে, বেরিয়ে আসছে রক্ত, তার রং সবুজ ও সাদা। বন্ধুরা ভয় পাচ্ছে, ভয় পেতে পেতে সরে যাচ্ছে দূরে। মাঝে মাঝে ভেসে আসছে মায়ের চুলের গন্ধ, বাবার বুকের গন্ধ, আমার চোখ বেয়ে গজিয়ে উঠছে শিকড়। শরীর থেকে ঝরে পড়ছে শুকনো পাতা, আমি এগিয়ে চলেছি আরো একটা শীতকালের দিকে। কথা এক একটা শীতকালে আকাশ থেকে সন্ধেবেলার প্রার্থনা শোনা যায়। চারপাশে অজস্র মানুষের নিস্তেজ ভীড়, আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো ফুরিয়ে যাওয়া অস্পষ্ট চিত্রপট খোঁজার চেষ্টা করি। এক এ

ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ — পর্ব ৩ : জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

Image
ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ -- ৩য় পর্ব      এখানে আলাদা করে আমন্ত্রণ জানিয়ে কেউ কাউকে ডাকার নেই। ডিনারের টেবিল নেই আলাদা করে, বুফে সাজানোর ব্যবস্থা হচ্ছে মানেই ডিনারের সময় আসন্ন। দু একজন সচেতন মানুষ নিজেরাই প্লেট নিয়ে দুটো স্টার্টার তুলতে এগিয়ে গেছে। কেউ একহাতে বিয়ারের বোতল নিয়েই স্টার্টার তুলে নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। দুটো মেয়ে সালাড নিয়ে বসে আছে, ভেজ স্টার্টারের অপেক্ষায়। ওরা ননভেজ খাবে না। টায়রাকে এগিয়ে আসতে দেখে ইচ্ছে করেই প্রাজক্তা গলার স্বর এক ধাপ তুলে বলল ‘ডিনার নেই করনি? কাঁহা গুম হো যাতে হো তুমলোগ!!’ ‘তুমলোগ’-এর মধ্যে টায়রার বন্ধুরা নয়, অপ্রতিম পড়ে– এটা বুঝেই অপ্রতিম তৎক্ষণাৎ উত্তর দিল, ‘আরে প্রাজক্তা… সারা সন্ধে পুল টেবিলে কাটিয়ে দিলে… আমাকে তো দেখতেই পেলে না!’ প্রাজক্তা মারাঠি… বাংলাটা টেনেই বলে। অপ্রতিমকে দেখে এতটুকু অপ্রস্তুত না হয়ে নিজের সপ্রতিভতা বজার রেখেই বলল, ‘আর কী দাদা! আপকে সারি লাইনে টায়রাকে সাথ ভেয়াস্ত থে… আমি বেচারী আর কী করতাম!’ ‘তাহলে এখন চলো… একসাথে কাবাবগুলোর অ্যাকসেপ্টেন্স টেস্ট করি… ডেজার্ট পে চর্চে করি!’, বলে প্রাজক্তাকে একরকম কনুইয়ের মাঝে হাত গল

আদিদেব মুখোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা

Image
চানঘরে গান রিডাক্স   অসুখী, অন্ধকার আত্মা; চান করার সময় নিজেকে যখন সাবান মাখাস, আবিষ্কার করিস যে কখনোই তুই এগুলো চিনতে পারিস নি! পেট দিয়ে, কোঁকড়ানো চুল দিয়ে চকচকে উরু আর লম্বা চুল দিয়ে ফেনা গড়িয়ে নামে, পায়ের কাছে জমা হয়–অনুগত পোষ্য ওরা, অল্প আঘাতেই সরে যাবে তাই আগে থাকতে কৃপা চাইছে মনিবের কাছে!  দুঃখী, হাড়-জিরজিরে আত্মা নিশ্চিত জানি ভেতরেই তোর বাস ... আঃ! তাও কেন তাকাচ্ছি আয়নার দিকে ? কেন দুজনেই মাথা নাড়ছি, ও আমার দিকে এবং আমি ওর দিকে চেয়ে ভাবছি এমন কোনও ভোর আসেনি বুকের দমবন্ধ পাথর সরিয়ে, কেউ গোর থেকে উঠে এসে বলেনি, "আমি মৃত্যুর পরের খবর জানি ! "  হতভাগা, সাবান মাখানো আত্মা; আমার পেচ্ছাবের জায়গাটা জ্বালা করে উঠছে, আমি ঐ চিড়চিড় ঢেউকে এখনও চিনতে পারি, ছোটো থেকেই ও আমায় ভয় দেখায়, চাপ দিলেই হিরের কুচি এসে পড়বে, ঝকঝক করবে পায়ের কাছে বরাবর জানি ওরা অভিশাপের চিহ্ন।  বিবর্ণ, ছালছাড়ানো আত্মা; রক্ত মুছে মুছে যাবি, নিজের রক্ত বারবার নিজেকেই মুছতে হবে, লোপাট করতে হবে। কুঁকড়ানো, হিংসুটে আত্মা; বাথরুমে মরে পড়ে থাকলে, রক্ত গড়াতে থাকলে, সাবানে রক্ত বিজবি

মাসুদ শাওনের গুচ্ছ কবিতা

Image
সাপিনীর পদাবলী গ্রাম জমিদারের গৃহিণী নাকে নথ চোখের কাজল করুণা ছড়ায় যার ভয়ে গ্রাম কাঁপে দিনে সেও প্রতিরাতে ওই চোখে ডুবে যাবে ভয় পায় সাপিনীকে লেখা বন্ধুরা গুছিয়ে নিতে বলেছে জীবন আমি বলি, অস্থির হও অস্থির তোমার ব-দ্বীপ আলুভাতে থালুথালু আর দাঁড়াও, সুদূরে ভাসিও না চোখ              কোনো আশায়, স্মৃতিতে... কাছের এ দেখায় যে সপ্রতিভ বিদ্যুৎ চমক তাকে চকোলেট ভেবে হাসো বিস্মিত আবেগে দেখ, দু'হাতে ছড়ানো পাতাপুতি নৈয়ের পাহাড় উবু থাকা মেয়েটিকে ডিঙিয়ে হাঁফিয়ে গেছে। ছড়া কাটে বুড়িপোড়া ঘরের আলোয়                                     কোনো বিস্মিত গাঁয়ের মেয়ে আলতাপাটি পা পাতি বলে সে মেয়ে উঠোনে                                             জলের বিদ্রুপে নামে শুধু তুমি আজ ও মেয়ের বিরহে কলকাতা নগরের সাথেই কুমিরডাঙা খেল এত পাতা জড়ো করে জানোনি– জল গাছের দেহে                                    অবশ পাতায়, খোদলে জমে শুধু নগরীর বুকে কান্না জমে না।                      করুণ ভাপ হয়ে নীল-দিকে ফিরে যায়                                 উদাসীন, অভিমানে, নিরাশায় বারোমাস্যা ঘুম আসে না ঘ

চারটি কবিতা : তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়

Image
উতঙ্কের চোখ তারপর সমস্ত ভার নামানোর দিন ঘনিয়ে এল, ঘনিয়ে এল যতি। মুহূর্ত বিস্তারকামী স্বৈরিণী হয়ে ছাতি লেহন করছে, জিভের ধাতব শরণে বুক কাঠ... এই আশ্রমিক বালখিল্য সংযমের মেদ একগাছা চুলের প্রকল্প হয়ে খসে গেল কাঠসংসারের সাথে।                                   আয়ু কাঁপছে। স্বতঃপ্রণোদিত। কান্না উত্থানের অভিমুখে হাত বিছিয়ে ধ্বংস ঘিরতে এল যে মেয়ে, তাকে বধমন্ত্র শেখাতে লোভ হয়। মারো এই অপরিণামদর্শী অশ্রধারণের তাপ, মাংসগলনের প্রকোপ, মারো সাহচর্যে, গার্হস্থে; হাত ফুটো করে জল মাটি স্পর্শের পর হত্যা অসূয়ার ঘোড়া, তার গমনের আগে মারো। পদ্ধতি গান। এবারে যৌবন ঘোষণা করে গুরুমুখ বায়ু হয়ে যাবে। উপলক্ষ্য স্মৃতি। ছিল নিষ্ঠার পথ। তাকে কেটে, কায়া দিয়ে খসে যাচ্ছে গৌতমের হাড়। দৃশ্যের বার্ধক্য ক্লীব। মন তাকে পেরোতে পারেনি। আহুতি ছিল জরাবাহক হাওয়া। পদার্থের ভিতর পদার্থ হয়ে আছে যে বিবাহ, তাকে সম্বল করে আমরা আনন্দ করছিলাম। এই দিনাতিপাত পূর্বসূরিদের সিদ্ধি স্মরণে রেখেছে, এই উল্লাস বলয়ের ভিতর আমাদের এমন ভেলকি দেখাতে থাকে মুহুর্মুহু, আলোর গমন নিয়ে সন্দেহের অবসর জোটে না। ছিল জরাবাহক হাওয়া।