সুমন সাধুর গুচ্ছ কবিতা
কমরেডের আজ দারুণ জ্বর
কমরেডের আজ দারুণ জ্বর
ইতিহাসের পৃষ্ঠা ওল্টাতে ওল্টাতে দুপুর গড়িয়ে যায়
একটা আলুর খোসা ছাড়িয়ে চারটুকরো করা গেল
পাশে কাঁহাতক পেঁয়াজের ঝাঁঝ
জ্বরের শরীরে হার্ট চলে দ্রুত গতিতে
আর দুপুরের অবশ্যম্ভাবী মাস্টারবেশনের পর
একটা সিগারেট
ধোঁয়া উড়িয়ে বিদ্যুৎ চমকে ওঠে স্নায়ুতে
এতকিছু দেখার পর বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবি
কমরেডকে আমি সমর্থন করি না
ঘৃণা করি না
বরং পরখ করি, যাচাই করি
যেভাবে দুই আর দুইয়ের বিয়োগে নির্মিত হয় অদ্ভুত গোলাকার
তাকে তীব্রভাবে শূন্যতার দিকে ঠেলে দিই
ক্ষণজন্মা
যুদ্ধের চারপাশ বড়ো একা
পৃথিবী জুড়ে ওড়ে ছাই
আগুনের দেখি কী ভীষণ আস্পর্ধা
কিশোরীর রক্তে মাছি
ভনভন ভনভন
আগুন বেড়ে ওঠে গুম মেরে যাওয়া কান্নায়
ঝড়েদের যুদ্ধ থাকে না আর
উড়ে আসে থকথকে মাটি
এই মাটিতেই কঙ্কালসার, ক্ষণজন্মা পৃথিবী
যার এক হাতে গোলাপ, আরেক হাতে ধানদুব্বো
উপসংহার
অধ্যায়ের মাঝখানে জ্বর আসে
জ্বরের অস্তিত্ব সোম থেকে শনি — রোববার ছুটির দিন
সে আসে না৷ যন্ত্রণা আসে।
গালে, ঠোঁটে, বুকে, নাভিতে।
জ্বরের ঘোরে শুনি পাড়ার ট্যাপ কল খুলে যাওয়ার চিৎকার।
একদিন জল থেমে যায়, ফোঁটা ফোঁটা কপালে পড়ে,
অথচ জ্বর— আসছে তো আসছেই।
ইমোজি
কী নিরুপদ্রব কর্মমুখর জীবন আমাদের। অথচ দ্যাখো, কে কাহার! বিশদে পড়ার জন্য অপেক্ষা করে একা ঠায়। যেন একটা সময় ধরে রাখার জন্য মানুষ মানুষের কাছে ঋণী। ইদানীং কথা বলতে ইচ্ছা করে। অথচ মুখোমুখি হলেই কথা থাকে না আর। মানুষ এভাবে শব্দহীন হয়ে পড়ে। মোবাইলের ইমোজি শিখিয়ে দেয় একটু স্মাইল প্লিজ, এবার কাঁদো, এবার চোখ মারো, জিভ বের করে অট্টহাসো — ভিতরের কাকুতি বেরিয়ে আসুক, তবু কথা বোলো না।
এঁটো চিৎকার
দুপুরের মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরে। জানলা দিয়ে দেখি পথিমধ্যে ছড়ানো সিঁদুর কৌটো। কোন দূর আগাছা থেকে ভেসে আসছে সোমত্ত শাঁখা পলা আর দু-টুকরো চুল। এইমাত্র পুরিয়া ধ্যানেশ্রীতে বিদায় জানিয়েছে মহিলা তার বরকে। ভেসে আসা জল রাগসদৃশ। বর্ষাতি দুপুরের তেজ থেকে নিভে যায় সধবা শরীর। ঘরের আলমারি থেকে সাদা কাপড় বের করে গায়ে দিই। আয়নায় দেখি, হা বিধবা জীবন আমার। এ পুরুষ-শরীরে কেন কোনো এঁটো গন্ধ নেই!
© সুমন সাধু
অঙ্কন: শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
Comments
Post a Comment