অনিন্দ্য সরকারের গুচ্ছ কবিতা : গান ছুঁয়ে ছুঁয়ে
১.তোমার আনন্দ আমার পর
‘তাই তোমার আনন্দ আমার পর'
এ কথা বলে তুমি থেমে গেলে।
সেই থেকে তানপুরার মতো
সুর তুলে কেটে যাচ্ছে দিন
চাঁদের থেকে ঝরে পড়ছে রাত।
এমনকি অমাবস্যার ঘোর অন্ধকারে
আমার দুঃখরা সব বেমালুম
জোনাকির ভাষ্য শিখে নিল।
আমার মধ্যে যে আমি
তাকে তুমি ভালোবাসার আসন পেতে
বসিয়ে রেখেছো তোমার পাশে।
২. শূন্য এ বুকে
আমি দুঃখ আড়াল করতে পারি না
কষ্টপাথরকে চেপে রেখে
ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিঃশেষ করতে
পারি নি কোনোদিনই..
দীর্ঘশ্বাসে হাহাকার উঠে আসে।
তখনই কে যেন গেয়ে যায়
‘শূন্য এ বুকে পাখি মোর আয় ফিরে আয়'
আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠি
ঠিক যেন নজরুলগীতি।
৩. আমি অকৃতি অধম
রাত গভীর হলে আমরা ব্যস্ত হয়ে উঠি
চাওয়া-পাওয়ার হিসেব করতে বসি
পাওয়ার চেয়ে চাওয়ার পাল্লা
ভারী হয়ে ওঠে।
হিসেব মিলতে চায় না কিছুতেই।
হঠাৎ জোৎস্নার আলো গায়ে এসে পড়ে
শীতল হাওয়া যেন মনকে শান্ত করে দেয়
ঠিক তখনই রজনীকান্তের গান মনে পড়ে
‘আমি অকৃতি অধম বলেও তো
কিছু কম করে মোরে দাওনি'
সব হিসেব যেন সহজেই মিলে যায়।
৪. একা মোর গানের তরী
চড়াই-উতরাই, ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে
অবশেষে এসে দাঁড়ালাম
একা।
বালির স্তূপ, হাওয়ার শব্দ ছাড়া
কোথাও কিছু নেই আর।
যারা ছিল তারা ফিরে গেছে,
যার আসার কথা ছিল
সে এখনও আসেনি।
দিনের শেষে আমরা প্রত্যেকেই ভীষণ একা
জীবন যেন অতুলপ্রসাদী গান
‘একা মোর গানের তরী ভাসিয়েছিলাম নয়ন-জলে'।
৫. এমনি এসে ভেসে যাই
এবার ফিরে যেতে হবে
দেওয়ার মতো কিছু নেই আর
যেটুকু পাওয়ার ছিল
তা পূর্ণ হয়ে গেছে
আর কোনও দরজা খোলা রইল না।
ওই দ্যাখো, নিশাচরদের আকাশ ছেড়ে দিতে
হবে বলে পাখির দলও ফিরে যাচ্ছে।
দিন ফুরিয়ে এলো..
এবার আমাকেও চলে যেতে হবে
সন্ধ্যার রেওয়াজে বসে কেউ যেন গাইছে
‘আমরা এমনি এসে ভেসে যাই'।
© অনিন্দ্য সরকার
পোস্টার : শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
Comments
Post a Comment