মহিউদ্দিন সাইফের গুচ্ছ কবিতা
বঙ্গভাষা সংবাদ
জাড়ের সন্ধ্যায় আগুন তাপার কালে
জঙি বাউরির কাছে একদা বঙ্গলিপির কথা, শুনেছিলাম।
অবাক্যি কালিহাঞ্জি সাঁঝ
কাঁজি-আলোতে শুধু দেখা যাচ্ছে তাঁর মুখ
বৃহদ্ধর্মবর্ণিত সেই গূঢ় নাক ও চোখ
একটি আবহমণ্ডলকে রচনা করছে।
লিপিকালের বঙ্গভাষায় একটি পদের ধূয়া তুললেন তিনি,
বোঝালেন এ কদাপি অর্ধম্লেচ্ছ চর্যাগীতি নয়
এর সাথে মিল আছে বায়ুরুৎম, পুষ্করশারী ও মহোরগ ভাষার কিছুকিছু
এবং প্রাচীন পাখুড়ির লাহান ধ্বনি দিয়ে তিনি একটি ভাবকেও জাগালেন
এভাবে মধ্যবর্তী বায়ুস্তর গাঢ় হয়ে
একটি নীলাভতম দুনিয়া পয়দা হল
মাঝের মান্দার আগুনকে চকিতে মনে হল
জন্মপলের মিহির আর
আমরা নীহারিকাপুঞ্জের মাঝে বসে আছি
তবুও আমার গুমান আর যায় না কিছুতে
বিভিন্ন অপূর্ণ বাক্যে তাঁর কাছে ভেদ জানতে চাইলাম
বিবিধ কূটধ্বনি যা স্মরণে এল
ব্যবহৃত হল একে একে
অগত্যা, কথাপ্রসঙ্গে তিনি লাল্হ দেশ ও মহাস্থবির কালিকের কথা শোনালেন,
একিন এল, তিনি সত্যই বঙ্গভাষায় কথা বলিতেছেন…
---------------------
ধ্যান ভেঙে
তোমার থেকে সরে ভাবি 'সাফাইরা'র ধ্যানে ডুবে যাব,
তুমিও আচকা ব্যথা, অনহা সুফি থেকে বাউন-বালিকা হবে ফের,
আর পায়ের নেউর রইবে পড়ে, প্রার্থনায়…
প্রার্থনায় বড়ো কথা
বিরক্ত হয়ে তাই বহুদিন খুঁজেছি নীরবতায়
বহুদিন বাসেরায় তোমার খুশবু আর নেই, এই আশঙ্কা,
'সেখানে কিছুই ছিলনা, নেই'
এই অনুভূতি…
এই চাওয়া যদি শূন্যতার নিকট, যদি এই চাওয়া বায়ুলোকে, মৃত্তিকার পিছে
কেন শুধু মূক থেকে তবে,
চুপ থেকে মুখে মনে প্রাণে
কেন হঠাৎ মৌন খুব লা-অজুদ হলাম না তখন…
কেন শ্মশানপারে জোড়ের জলে গলে গেল না
হঠাৎ বুঝতে পারা বিদ্ধ হৃদয়…?
তোমার অজুদ কেন ঘ্রাণে ঘ্রাণে বুঝে
পথের মোকাম থেকে নিজাত মাঙি নি সেইদিন…
ফলে তোমার বিরহগন্ধার মতো তুমি
শ্যামা বাহুড়ি হাওয়ায় হলে গুম,
তুমি সেই স্বচ্ছ পাখির ডানা মেলে
সুফি থেকে আরিক রাত্রি হলে
নেফেরি চিহ্নের পারা সুদূর ব্যথিতা হয়ে চলে গেলে
ভাবি, কেন চলে গেলে…?
-------------------------
মৌনতা বিষয়ে
সকাল ফর্সা হলে তোমাদের পাড়া দিকে যাই। আখড়া বনের পারে নিরল কুটিরে
তোমার সঙ্গে বসে কথা বলি, চুটি খাই, কত কথা, চিতিসুখ,
নীরবতা ভাঙে না ফলে আরও কথা…
কথা বলি, খেই তুলি পুরোনো নেহার
হাসপাতালের মাঠে খিরাম দোয়েলা আর খেলা ঘুরে ফিরে,
আমলি পাতার পারা তিরতির হাসি
দেখে প্রজ্ঞা জাগে, ঋতম্ভরা
খেই তুলি পুরোনো নেহার…
সূর্যাস্তের একল আমি নিভৃত ফুল হয়ে সুবাসে মশগুল
সেই কথা তুলি
রুদ্ধ প্রাণের কাছে নেচে দেখি, খেলে দেখি,
আমলি পাতার পারা হেসে তুলে তুলে আঘাত পাড়ি
মৌনতার মধ্যবর্তী বাচনক্ষমতাকে
ভাঙে না কিছুতে
একল ফুলের পারা সুবাসমগ্ন হয়ে আপনা মজনুন,
তামাম কোশেশ সব জলে চলে যায়
আপনা মজনুন এক বেজান বাতাস…
তোমার আমার মাঝে একা একা শুধু
বানাফ্সার ফুল হাতে
মৌনতা চুপ করে থাকে…
© মহিউদ্দিন সাইফ
অঙ্কন : ঋতুপর্ণা খাটুয়া
Comments
Post a Comment