আত্রেয়ী চক্রবর্তীর গুচ্ছ কবিতা
গর্ভশোক
সে বিষাদকণাকে চাইনি আমরা
বেলা বাড়লে বলেছি, 'ভেসে যাও' —
তার হাতে দিইনি রাঙাযোগ, মা-বাবার স্নেহঋণ
বরং প্রপঞ্চ-প্রপঞ্চ ডাকে কলহে মেতেছি দুইবেলা
যেটুকু চলে যাওয়ায় কাঁদতে নেই, তাতে
কে যাবে ভেসে?
আধফোটা পক্ষীশাবক, নহলি আঙুল
ভবিষ্যজন্মশাখা; আর কে কে যায়?
ভিটেমাটি, শিকড়, জরায়ুনদীটি যার নাম
এ নিঃস্ব দেহে একত্রে থাকার কথা জানি
জানি, পিতাশব্দ শিউরে ওঠে —
শিউরে ওঠে ঝলসানো বালিহাঁস
আঁতুরসুগন্ধি, ঘ্রাণ…
রঘুবংশ
অশ্বত্থ পেরচ্ছে ট্রেন, ধানের গোলা, অন্ন-বস্ত্র-কুলদেবতা
জানালার পাশে কে ও বিরহী কান্তা
মেটেসিঁদুর গোধূলি তনয়া!
সকালের হকার ডাক দেয় সোহাগ-সোহাগ
দ্বিতীয়টি নগরমৃণাল, দেহজ বিজ্ঞাপনে
আমি ঘরপোড়া ভিখারি — চোখ চলে যায় সিঁথির ভাঁজে
স্থিরচিত্র, নিজেকে যাচি
বেপাড়ার যুবক, তুমি উঁকি দিয়ে যাও বুকের ভিতর
জেগে ওঠে নীলচে স্তন, আমিষস্পর্শ
আমি স্নান সেরে নিই এই ফাঁকে; দেখি জল ঠেলে ডাক দিচ্ছ —
"এসো মেয়ে, দু'কদম অসভ্যতা শেখাই!"
শুভদৃষ্টি
প্রাচীন পাড়াটির গা ঘেঁষে দাঁড়াই — একচালা ঘর, নেভানো আলো
পৌষের শীত এসে জড়াচ্ছে গায়ে, জড়িয়ে নিই রুহানি চাদর
ব্যথাতুর শোক
সে রেখেছে হাত, রেখেছে চোখ,
আরো যা-কিছু শর্ত বিফলে যাওয়া, বজ্রঝিল্লিপাত
আনত শির দুটি, মাতৃভাষা, সকাম ঠোঁট
এসব খাঁ-খাঁ চিরে আরতিগন্ধ জাগে — এয়ো-স্ত্রী জোকার
শঙ্খ ও উলুধ্বনি
যেন যুগলে পূজিত হন, অবাধ্য দেবতা ফের
আমরা গোপনশ্লোক, আমাদের কিছু কবিতার শব্দ মিলে যায়
নিজেকে ঠেলি, তাকেও —
বন্ধুরা কানাকানি করে, জ্যোৎস্নাজল
প্রবাদসন্ধ্যায়…
© আত্রেয়ী চক্রবর্তী
অঙ্কন : ঋতুপর্ণা খাটুয়া
Comments
Post a Comment