অয়ন সিকদারের গুচ্ছ কবিতা

মণিহারা

শিকলে নিজের ঠোঁট; আগুনে সাতটি পাক জ্বলে
দালানে ধানের খই। আঁচলে মায়ের মত খাঁটি
গর্ভে বন্ধ্যা হওয়া একফোঁটা কবিতা আমার,
যদি সে কাঁদেও, যেন জলের শূন্য হয়ে উঠি…


উঠোনে পুড়ছে মুখ। শাড়িতে পাড়ের রঙ গলে
যেভাবে জ্বরের তাপ, ওর কোলে ভিজে ফেলে ঠাঁই
যেন সে একটিবার আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারে
সিঁথিতে আবির রেখে ধূপগন্ধে ভাঙন শোনাই


সকালে ধ্রুপদ হওয়া প্রতিটা লক্ষ্মীর পাঁচালি
আহারে বাতাসাভোগ, পায়েসে স্পর্শ করা পাখি
শাঁখাতে সুরের তালে যে-কটা পালক ছিঁড়ে আসে
তোমাকে সন্ধে ভেবে যেন 'অনামিকা' বলে ডাকি


দু'হাতে বধূর ধুলো; প্রসাদে প্রেমের রঙ লাগে
আঙুলে কান্না নেই, হৃদয়ও মোমের মত পোড়ে
জানালা বাবার মাটি, ঘৃণাতে লাঙল মিশিয়ে
তোমাকে খুঁড়লে আরো বাংলা ভাষার ছাই ওড়ে …

প্রাক্তন

মৃত্যুমুখ ছেড়ে উঠে আসে আনুষঙ্গিক অব্যয়…

দিতে দিতে নিজেকে ক্ষিপ্ত করেছি!
অথচ অপমানস্পৃহা 
আমাকে প্রেত ভেবে ছুঁড়ে দেয়—
এত অত্যাচার! তুমি চাইছ আরেকটু হোক

এ পাশা সৈন্যজয়ী। কেন প্রশ্ন করলে না?
রানিরা বিষের স্মারক 

অথচ স্বাভাবিক। বুকনি ছিতড়ে আসে হাতে আর পায়ে
উৎসর্গে তুমি-নাম, যেন কেউ বোঝে না…

নতুন বন্ধু এলে আমাকে শিথিল হতে হয়!

৩.
কালসর্প

মফঃস্বল। যদি না রাত্রি থেকে খুঁটে নিই মন

ক্ষোভ এখানে ঠাঁই মেরে শুয়ে থাকে
কেন-না, ঝিনুকের খোল
অন্ত্র-মাংস ছাড়া শরীর চেনে না

মন্থন যেখানে গাঢ়, হিংসাপ্রবণ
এখানেও মায়াব্যাধ উবু হয়ে আসে
                            যেন সম্ভোগ-প্রেম

মানুষ এখনও অমৃত চেনেনি অথচ 
বিষ বলতে উঁচিয়ে দেয় সম্ভাব্য ফণা

এতদিন গেল। আমাকে মেরেছ কবে
মনে নেই? যত মহাকাল, সব আমাদেরই বোনা!

৪.
লক্ষ্মীটি


তিমিরহনন করে এই তকমা পেয়েছি আমিও
খসে পড়ছে তারা-রাত্রি, মিথিলার খেয়াকূল ব্যথা

পেয়েছি সোনার রঙ, লক্ষ্মীমুখ তোমাকে আবার

এবারও গাছের মত স্নেহ পেয়ে মেয়েটা আমাকে
                            দূরে-দূরে ফেলে গেছে তিলদাগ
                                                           পদচিহ্ন তার…

হাতের আঙুল চেনে পথ আর পথের কিনারা
ঘুঙুরপায়ের লাল মুখোমুখি এসেছে সকালে

ধানের ছড়ার মত যুগ নিয়ে নূপুর-নোলকে
আমাকে পাথর করো। আমাকে অশেষ করে তাও,
                       কতটুকু দোষে বলো? রাতভোর দুঃখ সাজালে


৫.
নীলকণ্ঠ

আলস্য গাছ হয়ে এখানে দাঁড়িয়ে 
এখানে দাঁড়িয়ে আমি, বুকের ওপরে যেন কবেকার

পৃথিবীজন্ম থেকে আজকের সন্ধে অবধি
নিঃশব্দে জমা হয়ে এসেছে তোমার ঘ্রাণ
                          এসেছে অশোকধর্ম, হাতে নিয়ে পারদাস্ত্র তার

যথাযথ ভেদ করে আমার শরীর 
চোখ আর মনের থেকে মায়ের আদিম স্তন
ঝরে-ঝরে এতকাল গঙ্গা হয়েছে 
                                  অন্তত এবার

রক্ত হওয়ার আগে তুমি এসো। এসো আমরা
মহাপ্রস্থানের আগে আরেকটি বার তবে মুখোমুখি হই

এই যে হলুদ রঙ, মৃত্যু নেওয়ার আগে 
আকণ্ঠ ডুবে ওতে কিছুটা বিষের দাগ
                   কিছুটা নীলের ছোঁয়া আমি তবে ছিটিয়ে দেবই!

© অয়ন সিকদার

অঙ্কন:  অয়ন সিকদার


Comments

Popular posts from this blog

অনিন্দ্য সরকারের গুচ্ছ কবিতা : গান ছুঁয়ে ছুঁয়ে

অয়ন হালদারের পাঁচটি কবিতা

মুন্নী সেনের গুচ্ছ কবিতা : সম্বোধন