সৌমাল্য গরাইয়ের গুচ্ছ কবিতা


জাতিস্মর

 পৃথিবীর প্রাচীন লিপিরা
 কোনও এক গুহার দেয়ালে, এঁকেছিল জন্মদাগ 
মাটির অনেক নীচে তার 
পড়েছিল কালো কালো ছোপ 

আদিম ইঙ্গিত পেয়ে উন্মীলন কালে
 হেলে  পড়া চতুর্থীর চাঁদ
হেলে সাপ হয়ে নেমেছিল জলের ভিতর
স্বরযন্ত্র হতে যেসব ধ্বনিরা উৎসারিত 
স্তব্ধ ছিল তারা একদিন, আকাশের কান্নার মতন


ফুটে থাকা নক্ষত্রেরা যে আলোর  চোখ মেলে দিল অন্ধকারে 
সুড়ঙ্গ নির্মিত সেই পথে, দিকে দিকে যত দেখি
নদী, মাঠ,ছায়া চরাচর
বন, পাখি, পড়ে থাকা ছই
মনে হয় আমি যেন ইহাদের জাতিস্মর হই..



গর্ভিনী

জলের অতলে থাকে শাপলা রঙের মেয়েটি—যেন কালো রঙের একটা ঘরে, অন্ধকারের সাথে তার বসবাস।

অন্ধকার চিরকাল বড় একা—  আলো নেই কোনওদিন। দীঘির ভিতর নাগকন্যা ফুল তুলে আনতে গিয়েছিল মেয়ে। রক্তজবা পায়ে, রোদ্দুরের আলতা মেখে ঘাটে পা দিতেই, অপূর্ব একটা দুয়ার খুলে গেল। 

জগতের বিশাল দুয়ার— যেন একটা পদ্মযোনি  মা হতে পেল। গর্ভ দিল মেয়েটি। চিরকালীন যে অন্ধকার সে পেল নতুন মা, 
ঠিক তখনি একটা প্রজাপতি উড়ে বসলো লাজুক  নোলকে...

দীঘির জল সেই প্রথম প্রসব বেদনা অনুভব করল। শালুক ফুটল চারদিকে।
ভোর এল, সন্তানের মতো...


রমণীয় 
 
স্নেহকলসের পাশে রেখেছি আনত
মুঠি, যদি ছুঁতে পারি আমিও শিশুর 
সঙ্গ পাব। আমি হব একাধারে পিতা ও সন্তান
ঘুম থেকে উঠে ফিরে যাব গর্ভগৃহে
লেখা নেই শরীরের যেসব অজ্ঞাত গুপ্তধন 
উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে খুঁজব প্রতিক্রিয়াশীল
সেইসব গোপনতা, চরম জাগাব 
শরীরের উপর শরীর, মেঘে মেঘে ভেঙে দেব
সমস্ত দুয়ার। মুহুর্মুহু বৃষ্টি আর ক্ষণিক তফাতে
ঠোঁটের নৌকাটি দুলবে সংশয়ের ভারে 
স্পর্শের মুহূর্তকাল আগে মনে হবে
 স্তন নয়, কাঁপে তার হৃদয়ের কালো দুটি চোখ

অলৌকিক নভোশ্চর

মনে ভর দিয়ে হাঁটি। কেননা মনের চেয়ে দ্রুতগামী কিছু নেই। জীবন সড়ক জুড়ে বিসর্পিল পথ একই রকম ভাবে ঘাপটি মেরে আছে। সব রাস্তা, সব বিজ্ঞাপন অবিকলভাবে রূপায়িত।

তাহলে আমি কি পাব না সেই অবারিত মুক্তদলবিশিষ্ট পয়ার যামিনী? দ্বৈতশিশুর ন্যায় যাদের পিঠে শজারুর কাঁটা গেঁথে দেওয়া  আর তার অভ্যন্তরভাগে রয়েছ সুন্দরী তুমি! মুকুলিত, গুঞ্জনময়। সেকেন্ড বড় জোরে ছোটে, তাই তোমাকে দেখামাত্র ফিরে আসতে হল বিজুরীপলকে।  প্রত্যাবর্তনকালে দেখি, আমি কোথায়?
— তুমিই দাঁড়িয়ে আছ ঘরে। 

চমৎকার স্বনকের কম্পনে পেন্ডুলাম দুলে উঠলো। তুমি বা আমি দুজনের কেউই নেই, ঘরটাই নিজেকে দুরকমভাবে দেখছিল। 

© সৌমাল্য গরাই 
অঙ্কন:  শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়



Comments

Popular posts from this blog

অনিন্দ্য সরকারের গুচ্ছ কবিতা : গান ছুঁয়ে ছুঁয়ে

অয়ন হালদারের পাঁচটি কবিতা

মুন্নী সেনের গুচ্ছ কবিতা : সম্বোধন