প্রীতম কুমার রায়ের গুচ্ছ কবিতা : বাণ মঙ্গল
বাণমঙ্গল
১
ধীরজ হিমের রাতে, প্যাঁচাদের নিরন্ন বিষাদে
মাঘীপূর্ণিমার চাঁদ আজ যত অভিমান সাধে
ঘুমে দ্রব হয় দেহ, মন তবু জ্বলে ধিকি ধিকি
খোলা বাতায়ন পথে ভেসে আসা হাওয়া টুকু লিখি-
কান পাতি, শোনা যায়- হাজার হাজার স্রোত আগে
এভূমে যে রাজা ছিল, বাণগড় তারই নামে জাগে
ইতিহাস পুরাতনী, লোকমুখে বেঁচে থাকে কথা
কিছু যদি খাঁটি গুড়, কিছু তবে চিনির জড়তা
রাজার সহস্র কর মুছেছিল কৃষ্ণের বাণে
প্রেমের সারথি কেন যে অপ্রেমে গেল সেই জানে
আমি শুধু হাওয়াদের লিখে রাখি, যেমন রাত্রির
বুকে কাঁপে ঝিরিঝির- গাছে গাছ, শরীরে শরীর।
২
স্মৃতিসিক্ত নিরাকার, পদপৃষ্ট অতীত সাকার
রাজধানী কোটিবর্ষ, তীরে পুণ্য পুনর্ভবা যার
ত্রিদিক পরিখা ঘেরা, কল্লোলিনী রাখে বাকি দিক
এক মহাভারত আদি যেচেছিল নিঝুমের ভিখ
রাজা ছিল শিবপ্রিয়, রানী ছিল কালো আর ধলো
আজো সপ্রমাণে জাগে দুই দিঘী শান্ত ছলো ছলো
রানীরা সুড়ঙ্গ মতে সম্ভ্রম রক্ষা করে করে
সেখানে উদিত হত, সূর্য লাজে মুখ নিত ফিরে
এমনই অলখ কথা, কল্পগাছ, লোকগান যত
জেগে আছে মাটি ছুঁয়ে, কিছু ছায়া, কিছু বা সতত
আমি শুধু কাছে যাই, হাত রাখি ইতিহাস পীঠে
দেখি যে সহস্রাধার জেগেছে অধম করপুটে!
৩
কোটিবর্ষ থেকে দূর পশ্চিমের আর্যদেশাধারে
তখন উদিছে সূর্য- শ্যাম বর্ণ, প্রেমাষ্পদাসারে।
জাগো জাগো রথীবৃন্দ, জাগো প্রেম নিবিড় গভীরে
ছুটে চলো কুঞ্জবনে, যমুনার নিশিথিনী তীরে
দোলো বৈকুন্ঠপতি রাধিকার গলায় বঙ্কিম
হে পলাশ চাঁদ আমি তোমাকেই জেনেছি রক্তিম।
নিশিপদ্ম রাখি বামে, ধান্যশিষে দক্ষিণের ডোর
পশ্চাতে বেঁধেছে শ্যাম, অগ্রে রাধা হইল বিভোর
"কী কইব সখি তোরে, অঙ্গ বিহীন কী এ যাতন
তারি তরে হর্ষি-কান্দি, তারি লাগি শরীর পাতন",
এমত ব্রীড়াবনত রাধা যত আছাড়ি-পিছাড়ি
কান্হা চলে বৃন্দদলে গোকুলে নাচিয়ে শুক-সারী
কোটিবর্ষ থেকে দূর পশ্চিমের আর্যদেশাধারে
প্রণয়ে জাগিছে দিন, ডুবিছে অতলে অভিসারে...
৪
ভূ-ভারতে তার জন্ম অধর্মের গ্লানি শুষে নিতে
যে ছাড়ে ন্যায়ের পথ তারই সে হিতের বিপরীতে
প্রেমিক, মাখন চোর, গোপালক, দ্বারকাধিপতি
চিনেছে জগত তাকে ভারত শ্রেষ্ঠ রাজনীতিক
তবু কিছু বাকি ছিল, ছিল পুব অলীক, অধরা
যাদব কুলাধিপতি সেখানেও চেয়েছিল সাড়া
লিখছি যে ইতিহাস সেই কাহিনীর এই শুরু
আদিগন্ত রাজনীতি, প্রাচ্য ও প্রাতিচ্য, লঘু-গুরু...
© প্রীতম কুমার রায়
অঙ্কন : ঋতুপর্ণা খাটুয়া
Comments
Post a Comment