মন্দিরা ঘোষের গুচ্ছ কবিতা
আদল ভেঙে যায়
১.
রোদ ওঠার আগেই চেপে বসে অসুখ।
নিস্তেজ খোঁড়াখুঁড়িতে উঠে আসে ঝিনুকখোলার শূন্যতা ।
আধবেলার জ্বর বিলিয়ে দেয় কাঠচাঁপা ।
দুপাশে হাওয়াকল আর মিথ্যেকুচি।
কাঠের সিঁড়িতে জলপোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কুসুমঘর।
ভিজে দেশলাই একদলা শ্রাবণ ভাসিয়ে দেয় কাঠিতাপে।
২.
প্রেম আর প্রতীকী দিয়ে ঢাকা থাকে সব
সংশয়। তীব্র শিস বুঝিয়ে দেয় নিমজ্জনের সংজ্ঞা। মাত্রাজ্ঞানে থই থই ভুলপর্ব। আদতে মেঘে মেঘে ঘেমো অসুখের ওঠাবসা। বুজরুকি মিশে যায় প্রাত্যহিকে ।
সংসার মাখা হাতে এঁটো ঘোঁচে না।
৩.
জবাব লেখা নেই। মাটিশুদ্ধ উপড়ে নেওয়ার দগদগে ঘায়ে ওপর ওপর ঈশ্বর আর তক্ষকের শুদ্ধাচার।
সাড়হীন কলেবর। মানস পুড়ে যায়।
যা পেরিয়ে যায় ফিরে আসায় সে থাকে না আর।
আবার অন্য রং। আবার জল মাটি খড়। হাতে তাল তাল অনুশোচনা।
আদল ভেঙে যায়।
গরজ
গরজ ভেঙেছে কাজল। এবার ধানকলমির গান শুষে নিতে চায় সিঁদুরের পারা। সব জেনে গুল-বদন রক্তে বীজ পুঁতি। স্থল দিই। জল দিই। আকাশ দিই। দহ ফেঁপে ফুলে ওঠে। প্রসবের রাতে চাঁদ মুখ গুঁজে থাকে টাটানো স্তনের ভাঁজে।
নাড়ি ফেটে নক্ষত্র জন্ম। বোঁটা ভেজা হলুদ দুধ। চোখে পরিয়ে দিই প্রদীপের তাপ।কড়ে আঙুল দাঁতে কাটি। দুধে ভেজা স্বরে আধো আধো তোতাপাখির বুলি।
হাঁটুজল পার করে দিলেই ব্যস!সব সাঁতার আর ওড়া নিজস্বী হয়ে যায়। সবখানে নিয়ামক জল। মাছের কিলবিল।
আমার আর নাভির মাঝে মেলে দিই বরফের রাশ। প্রসবে ক্লান্তি আসে।মাটির বরাত ডাকি।সেবিকা ভোর লেপে দেয় জন্মের প্রলাপ।
আয়নাছইয়ে শুধু সাদা কালো- রং ফুরানো জলের ঘুনাক্ষর।
বিচ্ছেদের কোলাজ
১.
চোখের ঈষিকায় বিভাবরী মেঘ
ফোঁটা ফোঁটা ধারালোতে
চুরচুর বালিবাঁধের ধমনি
একটা য-ফলার তোড়ে
ভেসে যাচ্ছে উজান লন্ঠন
২.
মাঝরাতের বালিশ ফোলাচ্ছে
ঘুমহীন অন্তরা
জেগে থাকা মুছে ফেলতে ফেলতে
ক্লান্ত দরবারি রাত
চোখচিহ্নে ঊষসী শিশির
টুপ আঁকছে একার
৩.
আলুলায়িত ভোরের ভিজে
সাদা শূন্যতা ছড়িয়ে দেয় ঘুমে
একতাল দলা পাকানো
মনখারাপের এলার্ম ক্লর্ক
বেজে ওঠে
৪.
কাপের উষ্ণতায় মনখারাপের রুলি
ইমন ঠোঁটের উদারা ছুঁয়ে থাকে
ডিসেম্বরের মেঘ
নির্লিপ্ত শীতের দখলদারি মেনে নেয়
কৌশলপ্রিয় পাহাড়ি উচাটন
একটা নীলস্কার্ফ ভ্রমণের টিকিট হয়ে
উড়তে
থাকে
বরফচূড়ায়
৫.
প্রতিটি বিচ্ছেদের পর
বেড়ে ওঠে একটি নিজস্ব বাগান
জায়মান স্মৃতিপরব গুলি
কান্নার বিপরীতার্থক বয়ান
কলমঘরে উপচে পড়ে শূন্যউবাচ
বিপদ সংকেত
লুকোচুরি শিখে ফেলেছি
ঝিনুকের থেকে
ঢেউ আর বালির সংজ্ঞা
এরপর একটা অসমাপ্ত চিঠির
পুনশ্চতে এঁকে দেবো জল
প্লাবনের দ্বন্দ্ব সমাস
ভেঙে ফেলবে লাল বিপদ সংকেত
হিমের গুণিতক
এইসব সংকেতবাহী রোদে মিশে আছে
আগামীর শর্ত, ভরদুপুর আর মনস্তাপ
রাতের সাউন্ডট্র্যাকে খেলা করছে
ভুলচুকের রামধনু
ইমেল ছাপিয়ে যাচ্ছে কুহুডাকে
হেমন্তের ফলায় শিশিরের আনচান
চোখ তবু হিমের গুনিতক হয়ে উঠছে
জড়িয়ে আছি
লাইনের সঙ্গে জড়িয়ে আছি
মেটাফিজিক্যালি
ঘুরপথে দাঁড়িয়ে আছে ট্রেন
প্রতিটি জংশনে মনখারাপের লাল ব্যতিক্রম
ট্র্যাকের ক্যালকুলাস শিখছি
গার্ডম্যানের সবুজ রুমালে
সমাধানসূত্র থাকলেও
সেটি এখন পকেটের উষ্ণতায় জারিত
© মন্দিরা ঘোষ
অঙ্কন: শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
বিশেষ সহযোগিতা : ঋতুপর্ণা খাটুয়া
Comments
Post a Comment