শতানীক রায়ের গুচ্ছ কবিতা : কথনবিশ্ব
কথনবিশ্ব
১
এবারও অতিক্রম করব— এই সান্ত্বনাবাক্য কখনো বাণীরূপে চারিদিকে ছড়াতে থাকে। ছবির দিকে তাকিয়ে বিকেলসমষ্টির চিত্র ফোটে। এই তো এবার লম্বা লাফের মধ্যে জীবন পরিব্যাপ্ত হবে। জল-স্থল-অন্তরীক্ষের কবিতা এরকমই হয়। গতকাল কিছু জিজ্ঞাসা ছিল। মানুষ উড়ে বেড়ায় কল্পনাবাক্যে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে। ত্রিভুবনে এমন কথা নেই যে... জোড়গুলো খুলছে, আকাশে বাতাসে কী মধুর খেলা। আধখানা চাঁদ পাহারা দেয়। আধখানা বিচিত্র কারণগুলো ক্রমাগত থাকে।
২
আমি কবিতা লিখেই উঠে গেছি। পাখি থেকে শব্দে। চিত্র নিজেই কথা বলে। বন্ধুনদী অদ্ভুত শান্ত ছিল। যে-পাহাড় অনেক বছর আগে রেখে এসেছি। তারই গল্প বলি আজ। মৃদু মৃদু জ্বলে পাখি বাতাস আর ওম। আমার পুরোনো কবিতায় এসব কি কখনো আশ্রিত ছিল। কেউ কথা বলে। কেউ বলে না। নদীর জন্য আকুতি তোলা থাকে। কথিত আছে: একসময় গাছও কথা বলত, গাছই নাকি মানুষের বন্ধু হত। গাছের সামনে গিয়ে গল্প শোনানোর ক্রিয়া বিক্রিয়ায় এইভাবে জেগে থাকি আমি। এক পা করে এগোই আর পৃথিবী ছোটো হয়ে আসে।
৩
কথাগুলো অভিশাপ হিসাবে থাকে। যেখানে শব্দের অস্তিত্ব মনবিহীন। শরীরহীন এই শব্দগুচ্ছলতা। এদিকেই ছিল সেই গ্রাম। মানুষ এখানে আপন মনে মৌন থেকে যেত বহু বছর। আর হঠাৎ করে এক-একটা রা কাটার পর এক-একজনের জিভ খসে পড়ত। মাটি কি জিভের জন্য যোনি ধারণ করত?
৪
আহ্। সব তো এভাবে শেষ হয়। আয়ু কতটুকু থাকে। আত্মপ্রেমের উৎকৃষ্ট উদাহরণে সূর্য ওঠে। ওর ওর শরীর এরকম ছিল। উজ্জ্বল গায়ের রং। চামড়ায় হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে শেষতম বাক্য অবধি। কোনো একটা গল্পে মাঠের পরে মাঠে জেগে ওঠা ছিল। এত লোম। ঘাসের ভেতর ঘাসেরই ঢেউ। গাথাকবিতা। ওর ভেতর মাংস কেউ দেখেছি কি? তদুপরি অনেক ভেতরে লুকোনো থাকে শব্দ। মাঠ কেবল মাঠই বহন করে। সান্ত্বনা শুধু সান্ত্বনা। শরীর শুধু শরীর। এই পর্যন্ত।
© শতানীক রায়
অঙ্কন : শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
Comments
Post a Comment