অনির্বাণ সূর্যকান্তের তিনটি কবিতা
আটপৌরে অব্যয়
আমার বোন যখন বিধবা হয় তখন তার বয়স ২৪ , ভাগ্নের বয়স ৬ । বোন জামাইর বয়স ৩২ । হুট করে হার্ট অ্যাটাক । আমার ফরসা বোন, খুব ফরসা। সিঁদুর লাগালে মনে হত সকল অপরাধ জ্যোৎস্না খেয়ে আত্মহত্যা করবে। সিঁদুরে কপালে পৃথিবীর মৌমাছি গন্ধ নকশালের শ্লোগান দিত। ওর কপাল , এটা ডীপ ফ্রিজ নয়। আমি কত কি ভাবি, একটা ভয় তো আমার করেই, সবাই যেভাবে শিখেছে আঘাত করা। আমি মনে হয় ফুড়ুৎ করে পুড়ে যাবো। এতো দূর জলের শব্দ, এই দাঙ্গা, এতো এতো কিশোরীর বেণী । কিশোরীর বেণী জুড়ায় আমার প্রাণ, প্রাণ শব্দের সাথে হাহাকার চলে আসে। এই হাহাকার নির্বাণ বোঝে, বোঝে জাতিস্মরের গুহা, যেখানে সিঁদুর বুদ্ধ জাতকের বনভান্তে । সিঁদুর সিঁদুর ফেরিগান , সিঁদুরের ভেতর কিভাবে থাকে জামাইয়ের প্রাণ সেটা আমি কৃষি করতে করতে বুঝতে চাইতাম। আমার লাঙ্গলের ফলা আঘাত করে পাথরে, পাথরে ফুটে ফুল, ফুলের হৃদয় ছিঁড়ে বের করি কিশোরীর কানের দুল।
কপালের যে যৌবন আছে সেই আমি বুঝেছি বোনের সুজলা কপালে সিঁদুর দেখে । সেই সিঁদুর দেখে ওর জামাই গাইতো " রাই জাগো গো..."। কখনো কি দেখেছে কৃষক ঝর্না থেকে পানি উধাও এর চিত্র ? চুলের বেণী জানেনা বেণী ভাঙ্গার কথা। ভেঙে ভেঙে প্রাচীন রাজধানী রেখে গেছে কেবল প্রেমিকের কঙ্কাল।
একদিন জামাই মরলো, শরৎ কালে নেমে এল স্কুল ভাঙার জীবনী । জামাই মরলে পৃথিবীতে একটি রঙ বাড়ে। তার আগে পর্যন্ত সবই সধবা রঙ। এই রঙে সকাল বেলার ফুল তোলার গন্ধ থাকে। সিঁদুরের ইতি টানার কাহিনী টানতে যখন ওর কপালে লাগালো সিঁদুর, তখনও পৃথিবী জানেনা ছাতার সাথে বৃষ্টির সম্পর্ক, জানেনা রোদ মাখা ভাত শরীর খায়। সিঁদুর লাগিয়ে মোছা হচ্ছিল যখন তখনো আমি জানি একসাথে পৃথিবীতে আলো নিভে না একসাথে, আলো থেকে আলো আসে, অন্ধকার থেকে আসে জল ঝাপটানোর ভ্রুন। সিঁদুর মুছে ফেলার চিত্র দেখায় স্কুল ভবনে হুট করে বজ্রপাত । কোনো একটা ক্লাসের ছাত্র ছাত্রী হারিয়ে যাওয়ার কথা। না বলে কয়ে। উষ্ণতা না পেলে বজ্রপাত হয় কপালে কপালে সেদিন সিঁদুর মুছতে দেখে বুঝেছিলাম।
তারপর অনেক শনিবার গেল, অনেক বুধবার গেলো । মানুষের পায়েও লেগেছে অনেক কাদা । অনেক জল বয়ে গেছে , অনেক জলও ধুয়ে দিয়েছে আমার শরীর, কিন্তু সেই বোনের সিঁদুর মোছার দৃশ্য ভাবলে আমার চোখের প্রতি আমার বিশ্বাস উঠে যায়। সেই বোনের সিঁদুর মোছার দৃশ্যে তাকিয়ে দেখি, বোনের শরীর থেকে মুছে যাচ্ছে না জামাইয়ের গন্ধ , কেবল শরৎ কালে রজঃস্বলা মাটি – আকাশের সঙ্গমে জন্ম নিচ্ছে একটি রঙ “বৈধব্য”
১৫.০৮.১৪২৮
রোকসানা হ্রদ
নদীতে বাচ্চা ভাসছে, চাঁদ মরা । নেশা নেই , শাড়ি পরতে পারেনা। ভেজা সোয়েটার জবজব করছে, চুরমার মুখাগ্নি পেলে শ্রাদ্ধে বসবে চাঁদের। শুধরে নিও খবর, গঙ্গাজল শুকিয়ে যাচ্ছে, যাচ্ছে, যাচ্ছে যে তাকে ধরে রাখো মনের মানুষ। মঞ্চ ভেঙে গেছে, নাটকের আর আছে বাকি, নাটকের স্ক্রিপ্ট লেখার বাকি। নেশা হলেই নিষেধ মানার মানে নেই । নেশা মানেই শেষ হওয়া নয় বাউল গাছের বীর্য।
আগামীকাল উত্তরায়ণ শুরু। ব্রাহ্মমুহূর্ত শুরু হতেই শুরু হবে স্নান, নামযজ্ঞ, তোমার নামে শঙ্খধ্বনি পরবে। খসে যাবে ঘুম , দরজা খুলে যাবে। তুমি যদিও দরজা আর জিভের পার্থক্য বোঝো না তবুও আমি পতনশীল । আমার কৃষ্ণ রঙের শব্দ আছে। যা নেই তা থেকেই উঠে আসে তোমার হিংসা, তোমার বাগান। আমি কেবল জানি ফুল ফুটলে , ফুটে কত হাহাকার। হাহাকার এলেই তবে আসে আলপনা। চালের গুঁড়ো নো-ম্যানস ল্যাণ্ডে দাড়িয়ে থাকে অহঙ্কার বিজ্ঞান হাতে নিয়ে। যে মায়া বাড়িয়ে দেয় মুখ সেখানেই আমার স্বীকারের অর্গাজম , এই অর্গাজম থেকে জেগে উঠে অনন্ত গণিত।
সাইকোপ্যাথ যে স্বপ্ন দেখে
সেইসব প্রেমিকরা এ্যাপ্রোন পরে চা বানাতে বানাতে ব্যাখ্যা করে মানুষের একটিই জীবন আছে। জুতার ফিতেও আছে। রাত দুটা পঞ্চাশ! মহাকবি কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন জেগে আছে । তার এক্স নেই, নেশা নেই । আগুন কড়াইয়ে মধুচাক জমে আছে। কাঁধে নতুন হাইওয়ে ঋণ । পদ্মার প্রকৃত প্রস্তাবে সেতুর অল্পবিদ্যা। অপবিত্র নরক আমি, তবুও ভেনিসে চলে গেছে ট্রেন,কে নেবে না লুফে নিতম্বিনী শিরোনাম! হাত ধুয়ে খেতে বসেছে অষ্টম শ্রেনির বার্গারের দোকান, অগ্রহায়ন চলে এলো পিরিয়ড নিয়ে। সেইসব কলেজ,স্লোগান আর পুস্তিকা সুন্দরী নিয়ে অমরত্ব বিষয়ক সেমিনারে ঢোক গিলি জরা ও বিস্ফোরণ। প্রেমিকরা এ্যাপ্রোন পরে চা বানাতে বানাতে ব্যাখ্যা করে মানুষের বিয়োগফলের কর্ণসখা । অনেক পথের সংবিধান নেই বলে কি সড়ক বাতিও থাকবে না?
©অনির্বাণ সূর্যকান্ত
অঙ্কন : শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
Comments
Post a Comment