Posts

Showing posts from May, 2022

ঋতু স্মরণ: সায়ন সিংহরায়

Image
#ঋতু_স্মরণ গ্রীষ্মের প্রচন্ড  দাবদাহের মধ্যে অকাল শ্রাবণ নেমে আসে ৩০ শে মে ২০১৩। ঋতুপর্ণ পাড়ি দেন দিকশূন্যপুরে। ক্রিয়েটিভিটির চূড়ায় পৌঁছে হঠাৎ নাটকীয় অন্তর্ধান! এই ভাবেই যাওয়া মানায় ঋতুপর্ণ’র মতো প্রতিভার।রবীন্দ্রনাথের গানের কথা যেন প্রতিভাত হয় তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনে -‘আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না’, সেই জানার সঙ্গে সঙ্গে চেনা।  সত্যজিৎ পরবর্তী সময়টা কেমন হবে - এই রচনার সূত্রপাত করে দিয়েছেন ঋতুপর্ণ। রবীন্দ্রনাথ ও মহাভারত এই দুইয়ের মধ্যে যে সেতুবন্ধন সেই কর্মযজ্ঞের কাঠামোর স্রষ্টাও তিনি। তিনি নিজের মতো করে রাবীন্দ্রিক ভাবনা কনসিভ করেছেন , ডিকন্সট্রাক্ট  করেছেন , কখনও বা ভিতরে ভিতরে তর্ক করেছেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমায় তোমাকে ডিবাংক করতে হবে , সর্বদা পদানুসরণ করলে আমার চলবে না। চেনা গন্ডি, চেনা ছককাটা লক্ষ্মন রেখার বাইরেও যেতে হবে আমাকে। ছুঁতে হবে এক নতুন দিগন্তকে । একটা  শুরুয়াত হবে। নতুনকে চেনার, জানার , বোঝার বা শেখার এক গভীর তৃষ্ণা ছিল ঋতুপর্ণর মধ্যে।  ‘তোমার কাছ থেকে আমি আমার উত্তরাধিকার পেয়ে এবার আমি আমার পথ চলছি’ - মহাভারতের এই পাঠ ঋতুপর্ণ ওঁর  জীবনদর্শনে এবং কাজের মধ্যে

রূপসা সাহার তিনটি কবিতা

Image
অসীমের বাহুমূলে নীল পাথরের আকাশে  বাৎসায়নের তপস‍্যা টলটলায় হিমাদ্রির বুকে। শ্রমনের পিপাসা পবিত্রতার অবগাহনে অবলুপ্তির পথে ভাব বিনিময় করে। পাতাঝরার মরশুমে উৎকৃষ্টতার আশায় বুক বাঁধে ঋতু। খামখেয়ালীর মণিবন্ধে অকস্মাৎ এসে ঝড় তোলে রিফিলের উন্মাদনা। অভিবাদনের গায়ে মিশেছে অস্তিত্বের অভিসন্দর্ভ। বৃষ্টি ভেজা মাটির সোদা গন্ধ সেদিন শব্দ চয়নের ঝড় তুলেছি খাতায়। তুমি আশেপাশে কোথাও নেই তোমাকে খুঁজছি খাতায়; পাতার অলিগলিতে, পথের প্রান্তে  দ্রুত গতিতে চলে মধ‍্য রাতে  বাষ্পরথের গতি। আমি হারিয়ে যাই তোমায় খুঁজতে অসীমের বাহুমূলে। রূপক প্রতিবার শ‍্যাম্পু করার পর যখন চুল শুকাতে বসি,চুল গুলো আমার স্বাধীনতা চেয়ে বসে। আসতে আসতে সোহাগী রোদ্দুর চুলের শরীরে খেলে যায়। চুল গুলো কেমন একটু বেশি হেসে ওঠে। অম্লান ধাতুর মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। হঠাৎই কেমন স্বাধীন রোদকে ভালোবেসে ফেলে । হয়তো চুলের অন্ধকারটাও রোদের চোখে সুন্দর লাগে তার। স্থবির খুলিটাতেও কি সুন্দর খেলা করে বেরায় তখন চুল। হঠাৎই অন্ধকার নেমে আসে। রোদ চলে যায় সূর্যের বাড়ি। রোদ চুলকে স্নেহতে মাতায় ঠিকই কিন্তু থেকে তো আর যেতে পারে না। এরপর চুলে কাঁদতে বসে র

শৌভিক আদক রুদ্রের গুচ্ছ কবিতা : অন্তর বাহির

Image
                          ১। সন্ধি বিচ্ছেদ করার পর বুঝেছিলাম আমাদের মাঝের যোগচিহ্ন  কবেই ব্যাকস্পেসে মুছে গেছে  রাতের আলোয় দিনের আঁধারে ২। অ-দেখাতে যে দেখা থাকে তা নিয়েই তৈরি হয় আমাদের চোখের মার্কসসিট মাস্তুলে বসে আমরা চশমা পরে নিই দূরে স্পষ্ট দেখি কে কার চোখ উপড়ে নেয় ৩। সাপলুডো আমাদের ছোট থেকেই শিখিয়ে দেয় কীভাবে শুধুই ওপরে উঠতে চাইতে হয় সাপের গিলে খাওয়ার ক্ষমতা আমরা আত্মস্থ করি অন্যদের দেখে আমাদের জিভ সাপের মতো দুভাগ হয়ে যায় ৪। স্ক্রিন শর্ট নিতে নিতে  আমরা পারদের উষ্ণতা বাড়িয়ে তুলি সিক্রেট ফোল্ডারে জমিয়ে রাখি পরমানু শান দিই ছুরিতে সিগারেটের ধোঁয়া ওড়ে ৫। একাত্মতার গল্পেও বিষণ্ণতা থাকে হোন্ডা বাইকের সামনে বসে সুদীপ বলল কথাটা কদিন আগেই তার প্রেমিকার বিয়ে হয়েছে রাতে মাল টেনে উদুম খিস্তি দিয়েছে প্রেমিকার উদ্দেশ্যে একাত্মতা অনেকটা রিসাইকেল বিনের মতো দিন যেতে যেতে আমরা মুছে ফেলি সবটা  ৬। বাড়িতে চাল বাড়ন্ত জেনেও যে ছেলেটা মিছিলে গলা ফাটিয়েছিল  স্বাধীনতার পর সেই ছেলেটিই অনাহারে প্রথম মারা যায় আকাশে উড়তে থাকে জয়ের পতাকা ৭। শব্দ দিয়ে সুইসাইড নোট লেখা হলেও শব্দের কোনো সুইসাইড নোট থাকে

গালিব উদ্দিন মণ্ডলের গুচ্ছ কবিতা : চঞ্চুবিতান

Image
চঞ্চুবিতান বাবুই নির্বাণ  পুনর্জন্মে কলমি শাকের উঠোন  জাতিস্মর  ক্ষণহরিৎ আকাশ  মেঘের মাদুর বেছায় । চড়ুই আরও কিছুটা ফুরসৎ  উড়ো খই , শব, শব্দহীন    চঞ্চুবিতান  ওই যে ফেলে যাওয়ার কাফেলা ডানা গুটোতে হবে আর একটু পরেই পানকৌড়ি সাহারার বালিঘড়ি  জরায়ুর ভাঙা জল  ঘূর্ণন  রোমকূপ ছুঁয়ে নামে মৈনাক  ডুবো পাহাড় ,চঞ্চল । রাজহাঁস  স্বপ্ন আর কবরের ভিতর  এই যে দুটো শাদা রাজহাঁস চলে এসেছে কবিরাজ একেই সুস্থতা কইতেছেন দূর্বা অরণ্যে  উড়ে আসে বাল্মীকির ব্যথা  হামিংবার্ড ফিঙে পাখির লেজে ফিনিক্স পাখি দুলছে  তৃতীয় নয়ন খুলেছে  জাতক মঞ্জরী ।

সুবর্ণকান্তি উত্থাসনীর তিনটি কবিতা

Image
(১) নইলে কেমনে যা কিছু ছলনা এবে বশীকরণ স্বত্ত্বাস্থানিক বিচ্ছিন্নতা অস্তুতমাত্রে শালিক তথাপি ব্রহ্ম একক দৃশ্যের ক্লিন্নতা অথচ অনন্যোপায় ভোরের অর্ঘ্য ছিনিয়ে পিঁড়িতে আসীন নববধূ কুলীনের কৌমদীসঙ্কাশ নইলে কেমনে আর রাতের মহসিন (২) সঞ্জীবনী ক্লিন্ন রোদ্দুরে যে ব্যবধান কমিয়ে আনতে চাই তার ব্যাস আমার পৌঢ়ত্বের ছায়ার থেকে বড় ওই ক্ষুদ্র প‍্যাকিং বাক্সের মধ্যে অনায়াসে গলে যেতে পারি বলে যখনই বড়াই করেছি অকারণ চিতাকাঠের ক্ষেত্রফল মনে পড়েনি অবশেষ রুজি কাম নতজানু স্বেদ পুঁজি এইভাবে বর্ণাশ্রমে বিভাজন করবার আগে অনভ্যস্ত গণিকার মত নগরীর রাজপথে আমার ধমনীর স্পন্দন থেঁতে খইয়ের মত ছড়িয়ে গেছে যূথবদ্ধ শ্বাপদ আমি সোল্লাসে কোলাহল জুড়েছি স্ন‍্যাপ ড্রাগণ    স্ন‍্যাপ ড্রাগণ যখন তুমি এসে বসেছ বসেছ আড়ষ্ট চোখের পাতায় মনে হয়েছে অচেনা বর্ণমালা তুমি যাকে ছাই বলো আমি তার                        পলকা ছুঁয়ে উত্তাপ ঠাওর করেছি (৩) আবহমান একটি কিরিচবিদ্ধ রক্তাক্ত হাঁসের শরীরের পাশে এসে বসেছে ব্যাধ আসুরিক উল্লাসে ছাড়িয়ে ফেলে পালক একটি একটি করে আহঃ কত রক্ত কত রক্ত বলে ওরা শিউরে উঠেছিল কুমারীদের সেখানে বলি দেওয়ার প্রথা ছি

ঋতুপর্ণা খাটুয়ার তিনটি কবিতা

Image
|| প্ররোচনা ||  দীর্ঘদিন আমি আলো খাইনি। উড়ে যাইনি পাখার ব্লেডে চেপে। আত্মগত থেকেছি লাউএর খোলে, বেঘর হলাম একতারাটি যখন বেজে উঠলো। শামীম আমার জামাতে চুপ করে বসে থাকে। ওর মিলিয়ে যাওয়ার বড় তাড়া নেই।  ঘাসের বুকে মোটা স্তরের জল জমেছে। নেবুলাইজেশনের ফুরসৎ কই! উঠোনের প্রথম সিঁড়িতে শ্যাওলা ভীড় করেছে কোনও শবদেহের পায়ের স্পর্শ পাবে বলে।  এসো, ঘরকুনো অন্ধকার সিঁড়ি, চোখের নীচে জমা কালো দিয়ে টিপ এঁকে দিই, তোমার উপরে উঠে যাওয়ার পথে কারোর নজর আমি বরদাস্ত করবো না। || তুয়ভ্যমহং সম্প্রদদে ||         ...দান স্বরূপে  তোমাকে আমি আমার সালংকারা কন্যাকে দিলাম।  বহুকাল আগে নিজের স্বত্ব বিসর্জন দিয়ে কর্ণ দান করেছিলেন কবচকুণ্ডল।  এভাবে সমস্ত দুহিতার পিতারও একসময় অক্লেশে আত্মাভিমানী সূর্যপুত্র হওয়ার            সাধ জাগে। || সুর মণ্ডল || তোমায় সামনে বসিয়ে, অবেলায়। আঙুল আউড়ে গেয়েছি তানপুরায়।  ভূপালী রাগের বন্দীশ।  আমি রাত্রির প্রথমার্ধ।  তুমিও রেওয়াজ। ভোরে...আলাহিয়া বিলাবল।  কেন ভেসে গিয়ে ক্ষীণ হলে! ঘরময় এখন আবহ।  বলো কোন রাগে গাইবে গান! ত্রিনয়নী বিল্বদল।  অবরোহণে আমায় পাঠাবে সরগমে কোমল সা তে!

দীপ্তদীপ পাণ্ডার দুটি কবিতা

Image
আর্টারি প্রেম সম্পর্কে আমি বেশী কিছু বুঝিনা তবে, এটুকু বুঝি তোমার রক্তপ্রবাহের  একটি বিন্দু আমার ছুঁচের গোড়ায় দেখতে পেলে অনুসন্ধান শেষ হয়।  ******************* মৃত সম্পর্কের জন্য একটি কবরের সামনে দাঁড়াই রোজ। দাঁড়াতে হয়। আয়ুরেখা‌ তাচ্ছিল্য করার জন্য। যে মেয়েটি মারা গেছে অনেকদিন, সে হাত বাড়িয়ে পা চেপে ধরে। বেঁচে উঠতে চায়। শ্বাস নিতে চায়। মাঝখানে অনেক জন্ম দেখা হয়নি। লাল সুতোয় ঝুলিয়ে রেখেছিলাম শরীরটাকে। জন্ম বলতে মৃত্যুর হিসেব‌ করো তোমারা। আমি মৃত্যু বলতে বুঝি‌ অমরত্ব। © দীপ্তদীপ পাণ্ডা

রাতের কথা

রাত বিষয়টা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি, দিনের থেকেও। আমার কাছে রাত রহস্যময়। রাতের সাথে মানসিক, শারীরিক বেশ কিছু গভীর পরিবর্তন উপলব্ধি করতে পারি,  সারাদিনের বিভিন্ন সময়ের  বিভিন্ন কথার অনুরণন কানের চারপাশে, মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। জলপ্রবাহ স্থির হয়ে গেলে যেভাবে পলি থিতিয়ে পড়ে, দিনের শেষে রাতে আমরা, আমাদের ভাবনা গুলো থিতিয়ে পড়ে। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্য এটাই যে  মানুষ ভীষণ বদলে যায় রাতে। আসলে দিনের সাপেক্ষে বলতে গেলে অবশ্যই তাই।  রাতে বিশেষ কিছু অদ্ভুত বায়োকেমিক্যাল রিঅ্যাকশন মানুষের শরীরে হয়। যে কারণে এই সময় মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি, মানসিকতা, কথাবার্তা ও সার্বিক প্রতিক্রিয়ায় বেশ পরিবর্তন হয়। সুস্থিত থেকে কোনোকিছু করা এইসময় করা, বলা একেবারেই সম্ভব নয়। একটা বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন আমাদের মধ্যে অনেকেই এমন আছেন যাঁরা যখন দাবী করেন যে তাঁরা স্থির ভাবনা চিন্তা নিয়ে কোনোকিছু বলতে চাইছেন, তখনই তাঁরা সবচেয়ে বেশি দুঃস্থিত হন। এবার এই ধরনটা রাতে আমাদের সবার ঘাড়ে একরকম চেপে বসে।  " হেথা নয় হেথা নয়, অন্য কোথা অন্য কোনোখানে " ভাবনায় জারিত'রা এই ব্যাপারটা বেশ

নিরন্তর সমুদ্রমন্থনে যে গরল উঠে আসে : শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়

Image
এই ধরুন আমার এই মুহূর্তে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। সর্বাঙ্গ জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কষ্ট টা কোথায় হচ্ছে, কেন হচ্ছে কিছুতেই বুঝতে পারছি না। তাই ভাবছি আমার এই শরীরটা থেকে যদি আমি বেরিয়ে যাই। তারপর বসে বসে দেখি আমাকে। বেশ দারুণ হবে ব্যাপারটা।  এইবার আমি শরীর থেকে বেরিয়ে যাবো। দারুণ একটা সহজ পদ্ধতি পেলাম। আমি জানতে পেরেছি আমার শরীরে কতকগুলো চক্র আছে। নীচে থেকে উপরে যথাক্রমে মূলাধার, স্বাধিষ্ঠান, মণিপূরা, অনাহত, বিশুদ্ধি, আজ্ঞা, সহস্রার। এই যে চক্র গুলো এর মধ্যে আমি আছি মূলাধারে।  মূলাধারের সাধনাতে বসি। কিছুক্ষণ পরে চক্র টা খুলে গেল। এইবার আমি নীচে থেকে উঠে আসবো উপরের দিকে। সরু মাকড়শার জালের মতো পথ। এই যে রাস্তা বেয়ে আমি উপরের দিকে উঠছি, আমি জানি এটাকে বলে ব্রহ্ম নাড়ি।তো আমি উঠছি উপরের দিকে। অজ্ঞাতে এসে কেমন আটকে গেলাম। একি কথা হল। একটু হতবুদ্ধি হয়ে পড়লাম। আর যে পথ নেই। কোনো সুতো দেখতে পাচ্ছি না। থেমে যেতেই হবে।  আবার সাধতে শুরু করলাম। যা বুঝতে পারছি এবার আমাকে রাস্তা তৈরি করে নিতে হবে। তাছাড়া উপায় দেখছি না। তৈরী হল রাস্তা। বিশ্বাসের। কি দারুণ জোর বিশ্বাসের। মনে মনে