রূপসা সাহার তিনটি কবিতা




অসীমের বাহুমূলে

নীল পাথরের আকাশে  বাৎসায়নের তপস‍্যা টলটলায় হিমাদ্রির বুকে।
শ্রমনের পিপাসা পবিত্রতার অবগাহনে অবলুপ্তির পথে ভাব বিনিময় করে।
পাতাঝরার মরশুমে উৎকৃষ্টতার আশায় বুক বাঁধে ঋতু।
খামখেয়ালীর মণিবন্ধে অকস্মাৎ এসে ঝড় তোলে রিফিলের উন্মাদনা।
অভিবাদনের গায়ে মিশেছে অস্তিত্বের অভিসন্দর্ভ।

বৃষ্টি ভেজা মাটির সোদা গন্ধ সেদিন শব্দ চয়নের ঝড় তুলেছি খাতায়।
তুমি আশেপাশে কোথাও নেই তোমাকে খুঁজছি খাতায়; পাতার অলিগলিতে,
পথের প্রান্তে  দ্রুত গতিতে চলে মধ‍্য রাতে  বাষ্পরথের গতি।
আমি হারিয়ে যাই তোমায় খুঁজতে অসীমের বাহুমূলে।


রূপক

প্রতিবার শ‍্যাম্পু করার পর যখন চুল শুকাতে বসি,চুল গুলো আমার স্বাধীনতা চেয়ে বসে। আসতে আসতে সোহাগী রোদ্দুর চুলের শরীরে খেলে যায়। চুল গুলো কেমন একটু বেশি হেসে ওঠে। অম্লান ধাতুর মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। হঠাৎই কেমন স্বাধীন রোদকে ভালোবেসে ফেলে ।
হয়তো চুলের অন্ধকারটাও রোদের চোখে সুন্দর লাগে তার। স্থবির খুলিটাতেও কি সুন্দর খেলা করে বেরায় তখন চুল। হঠাৎই অন্ধকার নেমে আসে। রোদ চলে যায় সূর্যের বাড়ি। রোদ চুলকে স্নেহতে মাতায় ঠিকই কিন্তু থেকে তো আর যেতে পারে না। এরপর চুলে কাঁদতে বসে রুক্ষতারা ওকে ঘিরে ধরে। ধুলো বালি ওকে আঁকড়ে ধরে দম আটকে পড়া ভালোবাসা দিতে আসে। চুলের দম আটকে আসে কখনো সে রোদকে নালিশ করে কখনো পারেনা। চুলে জট পড়তে শুরু করে। একেকটা বড়ো বড়ো জট। চিরুনি তল্লাশি করেও চুলের দুঃখের কারণ জানতে পারে না সে। চুল নিজেকে গুটিয়ে নেয়। কখনো বসন্তের আগেই ঝরে পড়ে তীব্র অভিমানে।ঝরে পড়ার শব্দে রোদের চোখও ভিজে আসে। আকাশে মেঘ আসে।

সূর্যের খুব হিংসা হয় চুলকে দেখে অদ্ভুত ভাবে সম্পূর্ণ ভাবে সে রোদ কে পেয়েও তার চুলকে পছন্দ না।এরপর চুল আবার ভাবে নিজেকে ধুয়ে মেলে ধরবে। আর আবার সে নতুন করে রোদকে ভালোবেসে ফেলে।কিন্তু কখনো আবার সূর্যের জন‍্যে নিজেকে গুটিয়ে নেয় হয়তো সীমিত সীমাবদ্ধতা বুঝে সচেতনতা কাজ করে ওদের।


রাতের কবিতা

কালো ধোঁয়া পাশে ওরে কাশফুল,
ফটোকপি চোখেদের বাদামি।
ঠোঁটে ঠোঁট কাটাকুটি কি ব‍্যাকুল!
পাল্টাবে রোজ রোজ আগামী।

রুমালেতে বেঁচে থাকা অভিমান,
বালাপোশ ঢেকে রাখে গল্প,
স্পর্শরা করে যায় অভিযান।
আদরেতে প্রেম খুঁজো অল্প।

কালো সাদা ফ্রেমে প্রেম পিছুটান,
অগোছালো চুল আঁকি সোহাগে,
কথা গুলো আলাপের অভিমান।
বেঁচে থাক স্মৃতি গুলো বেহাগে।

কবিতারা বসন্তে পরিযায়ী,
কলতানে প্রজাপতি খেলে যায়।
গল্পতে  মুক্তিরা উদ্বায়ী,
চোখেদের ভাষা বোঝা বড়ো দায়।

স্বপ্নের মেনরোডে খুব ভীড়,
জলপট্টির বুকে ভিজে চোখ,
চুমুদের ঠিকানারা অস্থির।
শূন্যের বুকে বাজে গাঢ় শোক।

© রূপসা সাহা

অঙ্কন: শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়


Comments

Popular posts from this blog

অনিন্দ্য সরকারের গুচ্ছ কবিতা : গান ছুঁয়ে ছুঁয়ে

অয়ন হালদারের পাঁচটি কবিতা

মুন্নী সেনের গুচ্ছ কবিতা : সম্বোধন