Posts

গুচ্ছ কবিতা : বন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়

Image
পোট্রেট শুধু তোমার জন্যই আমি গভীর রাত পর্যন্ত জানলাটা খুলে রাখি। পড়ার অছিলায় বই,বইয়ের আড়ালে মোবাইল।সাইলেন্ট। শুধু তোমার জন্যই পরিশ্রান্ত মা কে মিথ্যে আশ্বাস দিই,বাবাকে বিশ্বাস। একটু স্পর্শের আবদারে ,অলীক স্বপ্নের জাল বুনতে বুনতে তোমার সাইকেলে চড়ে বসি। পেরিয়ে যাই পাহাড়,নদী সমুদ্র।কিছুতেই বলা হয়ে ওঠেনা আমাদের ঘরে রোজ ভাত হয়না। বাবার প্রেসারের ওষুধ টা দুদিন হলো নেই। তবু তিনি সারা দুপুর পরের জমিতে ধান বোনেন। মায়ের পুরনো মেশিন। আধুনিক ডিজাইন আসেনা! এসব জানা সত্বেও জানলার পাশে বসে শুধু তোমারই জন্যে আমি আমি সাক্ষী হীন জোনাকী র মাঠ হই।ওখানে আমাদের স্বপ্ন হারাবার ভয় নেই। ষড়যন্ত্র ছড়িয়ে পড়ছে চক্রান্তের মত মেঘ সে কাহিনী ঘেঁটে ঘেঁটে কালো আরো  যমুনার জল। হীরামন পাখি রে! এমন আচ্ছন্নের চাঁদ মায়াবী জ্যোৎস্নার আলো চেরা শিৎকারে গুটিয়ে তুলছে জাল  তরুণ নিষাদ।পোড়া প্রেম! বয়েস মানো না। বাঁশি তে আজও বিষ। সংসার হারা মেয়ে এখনো বোঝ না।   রাতের আখর আসি বলে চলে যাওয়া আলো পেছন ফেরে না। গাঢ় হয় ছায়া! পাখিদের গায়ে। ঘর কি আপন হয় কারো! ঠিকানা বদলায়। বৃদ্ধ আশ্রম জুড়ে অবসন্ন রাত শু

ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ : পর্ব ১৬— জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

Image
ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ : পর্ব ১৬ 'এখন, এই সময়ে ওখানে যাবে?' মৈনাক এক রকম অবিশ্বাস এবং বিরক্তি থেকেই কথাগুলো বলে ফেলল। আসলেই একপ্রকার ঝামেলা, অবাঞ্ছিত ঝামেলা ছাড়া আর কিচ্ছু মনে হচ্ছে না এখন আর। জমিদারবাড়ির ওই ঘরটায় কেউ যায় না। কী করে কেউ চাবি জোগাড় করেছে, কেন ওই ঘরে ছিল-- সেই নিয়েই কথা কাটাকাটি হচ্ছিল ম্যানেজারের সঙ্গে। ও নিজে শুনেছে। দুপক্ষের কেউ কিছু প্রমাণ করতে পারল না, অথবা 'এক হাতে তালি বাজে না'... তাই ওরা অফেন্সিভ কিছু করতে পারেনি। দায়টা ওদেরই, যাদের ক্ষতি হয়েছে তারা অতিথি। ওই ঘরে কেন গেছিল, ওই ঘরে কাউকে থাকতে দেওয়া হয় না-- এসব বলে নিজেদের ডিফেন্ড করতে পারবে না। বরং ওতে জটিলতা বাড়বে, প্রশ্ন আর কৌতূহল বাড়বে। কিন্তু কিছু একটা কারণে, সত্যিই রেসর্টের কর্মীরা ওই ঘরটা এড়িয়ে যায়। কারণটা এখন আর ভেঙে বলবে না, কিন্তু এড়িয়ে যায়... এবং এড়িয়ে যাওয়ার কারণটা যে খুব একটা স্বস্তির নয়-- এটা অব্যক্ত থাকলেও আন্দাজ করা যায়। মেয়েদের বলে দেওয়া হয়েছিল, সাবধানে রাতটা কাটিয়ে দিতে। সবাই একটা ঘরে আছে, কেউ বেরোয়নি। 'আর এই মেয়েটা একা যা খুশি করছে... কাউকে পাত্তাই দিচ্ছে না!'

বৈশাখী নার্গিসের গুচ্ছ কবিতা : শহরের ডায়েরী

Image
শহরের ডায়েরী  ছেঁড়া পাতা ২৪  একটা অর্ধেক কেটে যাওয়া দিনের পর আমার মনে পড়ে যায় ওষুধের কথা। কোথাও একটা শুনেছি, নিজের দূর্বলতাকে নিজের শক্তি বানাও। আমি বার বার ফিরে আসি চৌকাঠে। আজ দুপুরের পর টিকটিক করে মাথার ওপর শুধু ঘড়ির কাঁটা নাচছে। একটা মৌমাছি হুল ফুটিয়ে দিলে যেমন যন্ত্রণা হয়, ঠিক সেরকম একটা ব্যথা বুকের বাঁ দিকে। মা’কে বললে, এই বলে উঠবে, আরও সব উলটো পালটা জিনিস খাও।  ঠিক মায়ের কথার উলটো দিকে দাঁড়িয়ে আমি একটা সিগারেট ধরাই। আর হাওয়ায় ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিই যত আছে আদিখ্যেতা, ন্যাকামো গুলো। চাঁদের ঢলতি জওয়ানি দেখে একটা হাসি মাথায় ঘুরে ফেরে।  অপু দূর্গার সেই ট্রেনের হুইশল শুনতে পাই… অথচ কতদিন হয়ে গেল ট্রেন বন্ধ। পাখি উড়ছে, ফড়িং উড়ছে, মাথার কাছে যাবতীয় কথারাও উড়ছে। কিন্তু আমি ঠিক দাঁড়িয়ে আছি। যেভাবে দাঁড়িয়ে থাকার কথা। তার ছিঁড়ে গেলে এরকমই মাথার ওপর পিঁপড়ের দল বাসা বাঁধে। মগজের ভেতর যারা গোলমাল করে বসে। আর ভাবিয়ে তোলে একটা শহরের ভেতর আর একটা শহর কীভাবে দ্বীপ বানিয়ে তুলতে পারে। ভালোবাসলে কি করে হেরে যেতে হয়।  ভাবনার গাড়ি আবার প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে অন্য ট্র্যাকে… কুউউউ… ঝিক…ঝিক। তুমি কি এখন

ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ : পর্ব ১৫ — জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

Image
ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ : পর্ব ১৫ যেখানে প্রশাসন, পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা আর সমাজবিরোধীরা মিলেমিশে ঝালমুড়ির মত এক ঠোঙায় থাকে... সেখানে  আলাদা করে অপরাধ আর অপরাধীকে শনাক্ত করার ব্যাপারটাই খুব গোলমেলে হয়ে যায়। এই নিয়ে কোনো পলিটিকালি কারেক্ট স্ট্যান্ড নেওয়ার মানেই হয় না। আজকাল তো আর কিছু রাখঢাক নেই। লাইভ ক্যামেরার সামনেই বুক চিতিয়ে যা করার করে যায় লোকজন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম অপরাধ করেও কারো বিরুদ্ধে কোনো এফআইআর অবধি হয়নি। কেউ ঠাকুর, কেউ ব্রাহ্মণ, কেউ মাহান্ত, কেউ জেলা প্রশাসক... একটা লাইসেন্স আছে এদের নিজের ইচ্ছে মত চলার। এবং আইনকে কাঁচকলা দেখিয়েই জীবন কাটিয়ে দেওয়ার। আগেও হত, এখন প্রকাশ্যে সমর্থন এবং বাহবাও জুটে যায়। বাস্তব থেকে সিনেমায় ওয়েব-সিরিজে উঠে এসে, অপরাধ আর অপরাধীরা মনোরঞ্জনের মালমশলা হয়ে গেছে। তাদের ভাষা আর কাজ-কর্ম দেখে হাসছে শহরের দর্শক। কানে বন্দুক ঠেকিয়ে কারো প্যান্ট ভিজিয়ে দেওয়া দেখে হাসি পাচ্ছে। থার্ড ডিগ্রি দেওয়া দেখে হাসি পাচ্ছে। ভুল সময়ে ভুল জায়গায় এসে পড়ে মার খাওয়া বা মরে যাওয়া দেখে হাসি পাচ্ছে। সবার ওপরে ক্ষমতাশালী পরিবারদের দাপট উজ্জ্বল হয়ে উঠছে চোখ-মুখ। কী সহ

ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ : পর্ব ১৪ — জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

Image
ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ : পর্ব ১৪ জমিদার বাড়ির এই অংশটি একটু অন্যরকম, অন্য দিকের অংশের থেকে চার-পাঁচ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসতে হয়। একসময়ে নাকি গুমঘর ছিল। অথচ এখন রেনোভেট করে অন্যরকম করে দিয়েছে। দিনের বেলা এলেও একটা রহস্যের গন্ধ পাওয়া যায়, ঘরের দেওয়ালগুলো কেমন ঠান্ডা। এরা ইচ্ছে করেই অল্প পাওয়ারের আলো রেখেছে ঘরের এক একটি দেওয়ালে। ঘরটা এখন বদলে গিয়ে রিক্রিয়েশন রুমের মত করা হয়েছে। একদিকে ছোটো ফ্রিজে ঠান্ডা পাণীয় আর নানা রকম বিয়ার, তালা বন্ধ থাকে। সার্ভিসে থাকা স্টাফদের বললে অর্ডার মত আনিয়ে দেয়। আর একদিকে বসে থাকার মত কাউচ, বেতের চেয়ার, ছোটো টেবিল। বইয়ের তাকে পাতলা পাতলা কিছু বই। দুটো কাঠের দাবা খেলার টেবিল-বোর্ড, যেখানে চা-কফির কাপও রাখা যায়। কার্ড গেম খেলারও ব্যবস্থা আছে। অল্পসংখ্যক কিছু জনের এক বিচ্ছিন্ন রিক্রিয়েশন রুমের মত, কিংবা coquette's lounge। কিন্তু নো-স্মোকিং জোন। এসির মাধ্যমে ঘরের তপ্ত বাতাস বাইরে বার করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আসলে ঘরটায় ঢোকার একটাই দরজা, কোনো জানলা নেই। অন্য কোনো দরজাও নেই। ঘরের  ছাদটাও তুলনায় একটু খাটো।        অতিথিদের কেউ রাতে এদিকে আসে

অনিন্দ্য সরকারের গুচ্ছ কবিতা : গান ছুঁয়ে ছুঁয়ে

Image
গান ছুঁয়ে ছুঁয়ে           ১.তোমার আনন্দ আমার পর      ‘তাই তোমার আনন্দ আমার পর' এ কথা বলে তুমি থেমে গেলে। সেই থেকে তানপুরার মতো সুর তুলে কেটে যাচ্ছে দিন চাঁদের থেকে ঝরে পড়ছে রাত। এমনকি অমাবস্যার ঘোর অন্ধকারে আমার দুঃখরা সব বেমালুম জোনাকির ভাষ্য শিখে নিল।  আমার মধ্যে যে আমি তাকে তুমি ভালোবাসার আসন পেতে বসিয়ে রেখেছো তোমার পাশে। ২. শূন্য এ বুকে      আমি দুঃখ আড়াল করতে পারি না কষ্টপাথরকে চেপে রেখে ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিঃশেষ করতে পারি নি কোনোদিনই..  দীর্ঘশ্বাসে হাহাকার উঠে আসে।  তখনই কে যেন গেয়ে যায় ‘শূন্য এ বুকে পাখি মোর আয় ফিরে আয়' আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠি ঠিক যেন নজরুলগীতি।  ৩. আমি অকৃতি অধম      রাত গভীর হলে আমরা ব্যস্ত হয়ে উঠি চাওয়া-পাওয়ার হিসেব করতে বসি পাওয়ার চেয়ে চাওয়ার পাল্লা ভারী হয়ে ওঠে।  হিসেব মিলতে চায় না কিছুতেই।  হঠাৎ জোৎস্নার আলো গায়ে এসে পড়ে শীতল হাওয়া যেন মনকে শান্ত করে দেয় ঠিক তখনই রজনীকান্তের গান মনে পড়ে ‘আমি অকৃতি অধম বলেও তো কিছু কম করে মোরে দাওনি' সব হিসেব যেন সহজেই মিলে যায়।  ৪. একা মোর গানের তরী      চড়াই-উতরাই, ঝড়-ঝাপটা পেরিয

ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ — পর্ব ১৩ : জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

Image
ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ -- পর্ব ১৩     'আরে দেখ কে!... কেয়ারফুল ইয়ার!' গ্লাসটা পড়ে ভেঙে যেতে, আর কাচগুলো সশব্দে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে যেতে যতটা সময় নিল, তারই মাঝে প্রতিক্রিয়াবসতঃ চেঁচিয়ে উঠে পড়ল প্রাজক্তা। আড়ষ্ট হয়ে একজায়গায় দাঁড়িয়ে তখন অন্তরা, ওর হাতে জলের জাগটা কাঁপছে। পায়ের কাছে ছিটকে এসেছে ভাঙা কাচের টুকরো। 'ওখানেই দাঁড়িয়ে থাক, নড়লেই পায়ে কাচ ফুটে যাবে!', কথাগুলো বলতে বলতে খাট থেকে নেমে এগিয়ে এসে ওর হাত থেকে জলের জাগটা নিয়ে নিল ব্রততী। তারপর অন্তরার একটা হাত ধরে আসতে আসতে দু-পা পেছন দিকে নিয়ে এলো, খাটের দিকে। ভালো করে তাকিয়ে দেখল ঘরের কোথাও কাচ পড়ে আছে কি না। 'যা তুই খাটে গিয়ে বস, কিচ্ছু হয়নি। এত চাপ নেওয়ার মত কিচ্ছু হয়নি।' বলে ওকে একরকম হাত ধরে টেনে খাটের দিকে সরিয়ে নিয়ে এল ব্রততী, তারপর নিজে সাবধানে মেঝেতে বসে দেখার চেষ্টা করল পড়ে থাকা কাচের টুকরোগুলো। যতগুলো বড়ো কাচের টুকরো চোখে পড়ে চটপট তুলে নিল সাবধানে। 'দেখ কে, তু র‍্যাহে নে দে... লেট মি কল আ ফেসিলিটি হেল্প।' বলে প্রাজক্তাও উঠে পড়ল। ব্রততী হাতের ইশারায় ওকে বসতে বলে এদিক ওদিক থেক