ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ : পর্ব ১৬— জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়




ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ : পর্ব ১৬

'এখন, এই সময়ে ওখানে যাবে?'

মৈনাক এক রকম অবিশ্বাস এবং বিরক্তি থেকেই কথাগুলো বলে ফেলল। আসলেই একপ্রকার ঝামেলা, অবাঞ্ছিত ঝামেলা ছাড়া আর কিচ্ছু মনে হচ্ছে না এখন আর। জমিদারবাড়ির ওই ঘরটায় কেউ যায় না। কী করে কেউ চাবি জোগাড় করেছে, কেন ওই ঘরে ছিল-- সেই নিয়েই কথা কাটাকাটি হচ্ছিল ম্যানেজারের সঙ্গে। ও নিজে শুনেছে। দুপক্ষের কেউ কিছু প্রমাণ করতে পারল না, অথবা 'এক হাতে তালি বাজে না'... তাই ওরা অফেন্সিভ কিছু করতে পারেনি। দায়টা ওদেরই, যাদের ক্ষতি হয়েছে তারা অতিথি। ওই ঘরে কেন গেছিল, ওই ঘরে কাউকে থাকতে দেওয়া হয় না-- এসব বলে নিজেদের ডিফেন্ড করতে পারবে না। বরং ওতে জটিলতা বাড়বে, প্রশ্ন আর কৌতূহল বাড়বে। কিন্তু কিছু একটা কারণে, সত্যিই রেসর্টের কর্মীরা ওই ঘরটা এড়িয়ে যায়। কারণটা এখন আর ভেঙে বলবে না, কিন্তু এড়িয়ে যায়... এবং এড়িয়ে যাওয়ার কারণটা যে খুব একটা স্বস্তির নয়-- এটা অব্যক্ত থাকলেও আন্দাজ করা যায়। মেয়েদের বলে দেওয়া হয়েছিল, সাবধানে রাতটা কাটিয়ে দিতে। সবাই একটা ঘরে আছে, কেউ বেরোয়নি। 'আর এই মেয়েটা একা যা খুশি করছে... কাউকে পাত্তাই দিচ্ছে না!'
'কী হল... শুনতে পাচ্ছ না?' যতটা সম্ভব গলাটা নামিয়েও বেশ জোর দিয়েই ধমকের সুরে কথাটা বলল মৈনাক। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওকে যেতে হচ্ছে প্রাজক্তার পেছন পেছন। মেয়েটা পায়ে কোনো শব্দ না তুলেও, দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে করিডোরের এক কোণে, ওই ঘরটার দিকে!

- শিট! লক্ডই রকখে হ্যায় সালে!
- ইউ শুড নো ইট ইজ লক্‌ড... উই অল নো দ্যাট।
- চান্স লে রহি থি ইয়ার!
-এগুলো ননসেন্স জেদ... নাথিং এলস্‌!
-
- লিসন, আই থিংক ইউ নিড টু গো ব্যাক টু ইয়োর রুম। রাইট নাও!'

মৈনাকের মেজাজ অথবা শাসন, কোনো কিছুকেই প্রাজক্তা বিশেষ পাত্তা দিল মনে হল না। একবার মৃদু স্বরে 'রুক যা ইয়ার!' বলে দরজার সামনে মেঝেতে কান পেতে শুয়ে পড়ল। মৈনাক সত্যিই ধৈর্য হারাচ্ছিল আসতে আসতে। এবারে মনে হল, এখানে একে এভাবে রেখে দিয়েই চলে যাওয়া উচিৎ। প্রাজক্তার সঙ্গে এমন কোনো সম্পর্ক নেই, বা ভবিষ্যতেও কিছু গড়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই, যার দায় থেকে এই অসময়ে এখানে এর জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। একটু আগে নীচে একজন দেখেছে, এখানে আবার একজন দেখবে। এরপর কেউ কিছু জানতে চাইলে, ঘটনা প্রসঙ্গে মৈনাকের নামও আসবে অবাঞ্ছিতভাবে। এমনিই কেউ বলে দেবে, মৈনাককে দেখা গেছিল গভীর রাতে, কখনো নীচের ঘরে, কখনো এই ঘরটার সামনে। এইসব উটকো সন্দেহর জন্য জবাবদিহি করার অস্বস্তিকর পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হতে হবে মৈনাককে। ও স্থির করল, আর ঠিক দশ সেকন্ড দেখেই ও চলে যাবে।,
     কিন্তু ওই দশ সেকন্ডের মধ্যেই প্রাজক্তা অনেক কিছুর করার চেষ্টা করল নিজের মত। প্রথমে মেঝেতে কান পেতে কিছু শোনার চেষ্টা করল, তারপর দরজাটা চাপ দিয়ে ঠেলার চেষ্টা করল, যদি অল্প ফাঁক হয়। তারপর কী হোল দিয়ে এবং দরজার তলায় যে সামান্য ফাঁক দিয়ে বাইরে আলো আসছে... সেখান দিয়ে ঘরের ভেতরে দেখার চেষ্টা করল। পুরনো দিনের সেগুন কাঠের ভারী পাল্লার দরজা। আসলে দরজা না বলে কপাট বললে ঠিকঠাক মান দেওয়া হয়। এত কিছু করে আদৌ কী সুবিধে করতে পারল প্রাজক্তা, মৈনাক বুঝতে পারল না। হাতের ধুলো ঝেড়ে হতাশ দৃষ্টি নিয়ে উঠে দাঁড়াল প্রাজক্তা, তারপর মিচ করে  একটা শব্দ করে বলল, 'লাক কুছ জদা হি ব্যাডওয়ালা নিকলা ব্রো!'

- অচ্ছা হুয়া। ইয়ু কান্ট ফাইন্ড এনিথিং লাইক দিস। নাও প্লিজ... গো টু ইয়োর রুম।
- কাশ বোহ চাবি ক্যায়সে ভি করকে মিল যাতা ইয়ার!
- অব নহি মিল সকতা হ্যায় না... সো?
- আই নো... বাট কুছ ভি করকে একবার অগর এনট্রি মিল যাতি না...
- আরো ঝামেলা বাড়ত তাহলে! হোয়াটেভার হ্যাপেন্‌স ইজ ফর গুড...
- মুসিবৎ কহা নহি হ্যায়... কিসকো নহি হ্যায়... কিসি কিসি কা তো অ্যায়সে হি মুকদ্দর বন যাতি হ্যায় মুসিবৎ।
- আপ রহিয়ে আপনার মুকদ্দরকে সাথ... আপকো মুবারক হো মুসিবতেঁ... গুডনাইট!

কথাটা বলে সত্যিই পেছন ফিরে হাঁটা শুরু করল মৈনাক। মানসিক ভাবেই আর নিতে পারছিল না এইসব অহেতুক সখের কৌতূহল মেটানো খেলা, আর হেঁয়ালি। দুদিন আগেও এই মেয়ে অফিসে দেখলে চিনতে পারত না ওকে, দুদিন পরেও চিনবে না। তার জন্য এত কী লেবার দিয়ে যাচ্ছে ও? অন্য কোনো ছেলে থাকলে তো আসতই না এখানে মৈনাক। শুধু একা আছে বলেই? কীসের প্রত্যাশায়? যে দুজনের খোঁজে বেরিয়েছিল... তাদের খোঁজও তো করা হল না ঠিক করে! কী এমন জাদুটোনা আছে প্রাজক্তার ডাকে? প্রাজক্তার হাসিতে?

'তো আপ ভি বীচ রাহ পর, ইঁয়ু হী মুকরকে চল দিয়ে!'
কথাগুলো বলেই হা হা হা করে হেসে উঠল প্রাজক্তা। কথাটার মানে ঠিকঠাক না বুঝলেও, হাসি শুনে পেছন ফিরে তাকাল মৈনাক।
আলখাল্লার মত দুলছিল ওর কাঁধ থেকে ঝোলা স্ট্রল। কোনো বেদুইন মেয়ের মত নেচে উঠল ওর মাথার কোঁকড়ানো চুল।
'চলো শুকর হ্যায়... কুছ তো হোগা নাচীজ মেঁ... কে মুরকে দেখনে কা খয়াল তো আয়া...'
মৈনাক এবারেও প্রাজক্তার কথার কোনো উত্তর দিল না। প্রাজক্তা কথাগুলো বলতে বলতে ওর দিকে কিছুটা এগিয়ে এসেছে। ঠোঁটের কোনো ঝুলে থাকা নাটকীয় হাসির রেশটা রেখেই চোখদুটো সরু করে থেমে থেমে বলল প্রাজক্তা, "সচ কো তো সামনে আনি হি হ্যায় জনাব! আজ নহি তো কল... রাগিনী উইল স্পিক। শি মাস্ট স্পিক। রিপোর্টস উইল স্পিক। হাশ আপ করওয়ানে কি কৌশিশ তো হোগি জরুর... বাট দেয়ার ইজ আ ট্রুথ দ্যাট শি নোজ। ওনলি শি নোজ দ্যাট!'
- হোয়াট ট্রুথ।
- প্রত্যূষ কো ফঁসাকে কুছ হাসিল নহি হো গা... দেয়ার ওয়াজ সামওয়ান এলস। মেরা সিক্সথ সেন্স বোল রহা হ্যায়... কোই অওর ভী থা ইস ঘর মেঁ। অ্যান্ড ইভন প্রত্যূষ নোজ দ্যাট!
- আরে ফির সে বোহি কহানি... তো প্রত্যূষ কেন কিছু বলছে না ম্যাম?! হোয়াই ইজ হি নট ট্রায়িং টু সেভ হিজ ওন অ্যাস!
- বোলে গা। জরুর বোলে গা। জব অপনে পে আতা হ্যায় তো গুঙ্গা ভি চুপ নহি রহতা। বাট... মে বি...
- মে বি?
- মে বি... হি নোজ সামওয়ান ওয়াস দেয়ার... বাট কুড নট রেকগনাইজ দ্য পারসন।
- অ্যানাদার থিওরি।
- ইয়েস। অ্যান্ড কান্ট ডিফাই দ্যাট। আনফরচুনেটলি, ম্যায় ওহ রুম মেঁ ঘুস নহি পাই... আই কান্ট অ্যাটেম্পট্‌ টু রিক্রিয়েট হোয়াট মাইট হ্যাভ হ্যাপেনড। বাট, দ্য রুম মাস্ট ওপেন, সুনার অর লেটার... পুলিস আয়েগা তো দে উড ফোর্স দেম... নহি?
- তো?
- তো... হোয়াটেভার আই রিমেম্বার অফ দ্যাট রুম... আই উইল টেক মাই চান্স। মুঝে দেখনা হি হ্যায়... অপনি তসল্লি কে লিয়ে!
- কী একস্ট্রা জানতে পারবে তুমি আর একবার ওখানে গেলে?
- আই ডোন্ট নো। বোলা না... অপনি তসল্লি কে লিয়ে...
-
- এক বত বতাউঁ ব্রো?
- যো ভি হ্যায় না... মে বে কিসি অওর কো ভী লগ রহা হ্যায়... দেয়ার ওয়াজ সামওয়ান। শায়াদ মোর দ্যান ওয়ান পারসন আর থিংকিং দ্য সেম ওয়ে অ্যাজ মাইসেলফ। দে আর নট কনভিন্‌সড কে প্রত্যূষ হ্যাজ কমিটেড দিস। ব্যস্‌... ইদার দে আর অর অলসো নট কনফিডেন্ট, অর...
- অর?
- দে থিংক... ফঁস জয়েঙ্গে ইয়ে সব বোল কর। খুদ বুরা ফস জয়েঙ্গে ইস চক্কর মে... নেহি তো...
- নেহি তো?
- দে নো দ্যাট পারসন, অ্যান্ড ওয়ান্টস টু সেভ হিম। উসকা আইডেন্টিটি সামনে আনে হি নহি দেঙ্গে!
- নাইস... নাও প্লিজ... আই নিড টু গো টু মাই রুম।

মৈনাকের দিকে একটা নির্লিপ্ত হাসি নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল প্রাজক্তা। মনে হল, বিশ্বাস বা সমর্থন কোনো কিছুই আর প্রত্যাশা করতে চায় না মৈনাকের থেকে। তাই সে নিজে কী বিশ্বাস করে, তাও আর বোঝানোর চেষ্টা করবে না। কয়েক মুহূর্তের নীরবতা ভেঙে প্রাজক্তা বলল, 'ইয়ু নো দ্য ওয়ার্স্ট পার্ট অফ ইট?... গুনহগার কোই ভী হো... দেয়ার ইজ আ গার্ল আউট দেয়ার, আনকনশাস... ফাইটিং ফর হার লাইফ! দ্য বিগেস্ট ট্রুথ ইস... শি ইজ আ ভিক্টিম। শি হ্যাজ গন থ্রু সমথিং... দ্যাট শি নেভার এক্সপেক্টেড! জাস্ট থিংক মৈনাক... শি ওয়াজ স্পেন্ডিং সাম প্রাইভেট মোমেন্টস উইথ সামওয়ান শি ট্রাস্টেড। হাম লড়কিও কো শায়াদ কিসি কো ভরোসা করনা হি নহি চাহিয়ে... নেহি? '
কথাগুলো বলেই মৈনাককে পাশ কাটিয়ে দ্রুত চলে গেল প্রাজক্তা। ওর রুমের দিকে না, করিডোর ধরে সোজা অন্য কোনো দিকে। কোনো সমর্থন অথবা সমবেদনার প্রত্যাশা করল না। মৈনাকও ভেবে পেল না ঠিক কী উত্তর দেওয়া যায়। মনে হল, প্রাজক্তা সত্যিই অনেক কিছু, বা কিছু এমন জেনেছে... যা ও জানে না। যা, এই রেসর্টে থাকা কলীগদের অনেকেই জানে না। হাসপাতালে যারা আছে, তারা এমন কিছু জেনেছে। এমন কিছু ঘটে চলেছে ওখানে। রাগিনীকে নিয়ে সকলেই জড়িয়ে পড়ছে অনেক জটিল কিছুর মধ্যে, নিজের অজান্তেই।
মৈনাকের হঠাৎই এতক্ষণ পর মনে হল, ও যেন এই রেসর্টে একেবারে একা! কোথায় প্রত্যূষ , কোথায় ওই দুটো ছেলে... নীলেশ আর সতীশ-- এই সবকিছুই নিজস্ব ঘোরতর একাকীত্বের কাছে গৌণ হয়ে যাচ্ছে। প্রবলভাবে ঝেড়ে ফেলতে চাইলেও, একটা গায়ে এসে পড়া অপরাধবোধ গ্রাস করছে এই রাতের শেষ প্রহরে... প্রাজক্তা কী বলে গেল? কাউকেই ভরসা করা যায় না?


----------------------


কাউকে অভিযুক্ত থেকে অপরাধী বানিয়ে দিতে খুব একটা সময় লাগে না। কয়েকজনের সন্দেহ অথবা ব্যক্তিগত বিরোধ আর আক্রোশই যথেষ্ট।   দায় নিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে করতে বছরের পর বছর চলে যাবে। প্রভাবশালী না হলে মামলারও দ্রুত নিষ্পত্তি হবে না। জামিন পেলেও, কেউ আলাদা করে বিচারাধীন ভাবে না। সমাজের মাঝে সে অপরাধীই। কিছুদিন আগে অবধিও তার যা সামাজিক ভাবমূর্তি ছিল, এই একটি ঘটনায় তা চিরকালের মত বদলে যাবে। এবং অবশেষে সে আদৌ কতটা আইনী সহযোগিতা পাবে, তা নির্ভর করবে সে কাকে চেনে, কে তার হয়ে একটু মরচে পড়া নাট-বলটুগুলোতে তেল ঢেলে দেবে, রেঞ্চ দিয়ে ঘুরিয়ে দেবে... তার ওপর।
     আমাদের দেশে, যে কোনো মুহূর্তে, বিচারাধীন বন্দীদের সংখ্যা অনুপাতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া বন্দীদের থেকে বেশিই থাকে। যাদের ধরেই নেওয়া হয়েছে দোষী, বা যথেষ্ট প্রমাণ আছে যাদের বিরুদ্ধে-- তাদের বিরুদ্ধেও লম্বা মামলা চলে। বিচারাধীন থাকতে থাকতেই অনেকগুলো মাস অথবা বছর হাজতবাস হয়ে যায়। জামিন আর প্যারোল নিয়ে নিয়ে তার মাঝে মাঝে বাইরে এসে কিছুদিন কাটিয়ে যায়। সাংসদ থেকে চুনোপুটি-- সকলেই আছে এমন তালিকায়।  আমরা কেবল সংবাদমাধ্যমে চর্চিত আর হাইপ্রোফাইল মামলাগুলির কথা জানতে পারি... তাও ততদিন, যতদিন টিআরপি ওঠাতে পারে সেই সব ঘটনার মালমশলা।
         একসময়ের খুব আলোচিত এক অপরাধের, ক মাস পর কী হল, ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তি আর তাঁর পরিবারের কী হল, তাঁরা আদৌ সুবিচার পেলেন কি না... কিছুই আর জানা যায় না। কত মামলাই তো আউট-অফ-কোর্ট সেটলমেন্টের পথে এগিয়ে যায়। পাড়াতুতো দাদা, প্রশাসনে থাকা কোনো কর্তা, জেলাশাসক অথবা পুলিশ আধিকারিকও বুঝিয়ে দিয়ে যায় বাড়িতে এসে-- 'মামলা চলতে চলতে বুড়ো হয়ে যাবে, তারপরেও জিতবে কি না ঠিক নেই। তার চেয়ে একটা রফায় এসো।' কোথাও পরিবারের কেউ চাকরি পেয়ে যায়, কোথাও এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়, অথবা অভিযোগের ধরণ বদলে যায় যাতে কমজোরি ধারা লাগে অভিযুক্তের নামে। অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীদের একটা পেশাদারী নিয়মই থাকে-- মক্কেলের জন্য যাতে সব থেকে ভালো হয়, সেটা করা। তা যে সবসময়ে মক্কেলকে মামলা জিতিয়ে দেবে এমন না। যাতে, সব থেকে ভালো হয়।
      'কাল সকাল থেকে এই রাগিনীর ঘটনাটাও এমনই একটা খবর হয়ে যাবে। প্রত্যূষ এমনই একজন অভিযুক্ত হয়ে যবে। প্রাজক্তার কথা মত, যদি তৃতীয় কেউ ইনভলভ্‌ড থাকে... তাকে নিয়ে জল্পনা চলবে। অফিসে, ক্যান্টিনে... মিডিয়াতে। যাই হোক... প্রত্যূষের নামে যে দাগটা লাগবে... সম্ভবতঃ ওকে টার্মিনেট করবেই কম্পানি!'
প্রাজক্তার রেখে যাওয়া সন্দেহর বীজটা মৈনাকের মাথার ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। এই কথাগুলোই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ভারী হয়ে আসা চোখের পাতা, আর ভাবনা-চিন্তা বন্ধ করে দেওয়া মাথার ভেতর একটা ঘোর নিয়ে আবার সেই ঘরের দিকে ফিরে গেল মৈনাক, যেখানে প্রত্যূষকে পাহারা দিচ্ছে কবীর।

দরজাটা দু'বার নক করতে কবীর উঠে এসে খুলল। ওর কাঁধের ওপারে ঘরের ভেতরটা দেখার চেষ্টা করল মৈনাক। আসলে দেখার চেষ্টা করল প্রত্যূষ এখনো ঘুমোচ্ছে, না উঠে বসেছে। একটু ধারে সরে এসে ওকে ঘরে ঢোকার মত জায়গা করে দিয়ে কবীর একটা অদ্ভুত হাসি নিয়ে বলল, 'নেহি মিলে না দোনো?', যেন ও জানতই, ওদের আর পাওয়া যাবে না রেসর্টে। মৈনাক ঘাড় নেড়ে বুঝিয়ে দিল, খোঁজ পায়নি। তারপর ঘরে গিয়ে একটা চেয়ারের ওপর বসল, পা দুটো লম্বা করে।

- ফোন তো সুইচ্‌ড অফ হ্যায় দোনো কা... পুছা কিসি কো?... ছাত পে ভি নহি মিলে দোনো?

দুজনকে খুঁজতে বেরোলেও, তাদের খোঁজার থেকে বেশি সময় চলে গেছে অন্য কোথাও, অন্য কারো সঙ্গে। সেইসব কবীরের সামনে ভাঙতে ইচ্ছে হল না। এই ঠান্ডায় ছাতে যাওয়ার কথা মাথাতেই আসেনি। আর রেসর্টের চারপাশে যতটা খুঁজলে যথেষ্ট খোঁজা হয়, তাও করেনি। সেসব ঢাকতে, চোখে-মুখে একটা ন্যায্য বিরক্তি নিয়েই বলল, 'কই বচ্চে নহি হ্যায় ভাই। দো তিন লোগো সে পুছা... কোই কুছ বোল নহি পায়া। কিসি নে উনহে বহার যাতে হুয়ে ভি নহি দেখা। অব নহি হ্যায়... তো নহি হ্যায়। আই কান্ট ডু এনিথিং এলস!'

- আই ডোন্ট থিংক দেয় উড বি লাইং অ্যারাউন্ড সামহোয়্যার ড্রাংক।
- রেসর্ট মেঁ হি নহি হ্যায় সালে...
- অ্যায়সা চুতিয়াপা কৌন করতা হ্যায় ভাই! সবসে পহলে উনহি পে শক করেঙ্গে লোগ।
- শক ভ্যালিড ভি তো হো সকতা হ্যায়...
- হাঁ, ইয়ে ভি সহি হ্যায়...

কবীর এইটুকু বলেই সামান্য হেসে চুপ করে গেল। একেবারেই চুপ, চুপ করে নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। মৈনাকেরও ইচ্ছে করছিল না কবীরের সঙ্গে কিছু নিয়ে বেশি আলোচনা করার। কবীরকে কোনো প্রশ্ন ও করতে চাইছে না। চাইছে না, কবীরও ওকে কোনো প্রশ্ন করুক। প্রত্যূষকে এভাবে পাহাড়া দিয়ে জেগে থাকতে হবে, ঘুম পাচ্ছে... শরীর দিচ্ছে না আর। এভাবে একটা পোটেনশিয়াল ক্রিমিনালকে পাহারা দিয়ে জেগে থাকাও একরকম শাস্তি। যদিও, প্রাজক্তার সঙ্গে কথা হওয়ার পর, সত্যিই প্রত্যূষকে আর আগের মত নিশ্চিৎ অপরাধী মনে হচ্ছে না। বিশ্বাস করতে বাধছে, যে ঘটনাটা এতটাই লিনিয়ার।
প্রত্যূষ যদি ঘুম ভেঙে এখন ওঠে... তাহলে ওর থেকেই হয়ত কিছু জানা যাবে। অথবা, যখন ও সত্যিই কিছু জানাতে চাইবে। 'অপ্রতিমদার মত কেউ থাকলে প্রত্যূষকে ঠিক টেনে তুলত, সকাল হওয়ার আগে কিছু একটা নিজেদের মত করে জানার জন্য, নিজেদের প্রস্তুত রাখার জন্য।' ঘাড় ধরে তুলে ওকে জেরা করার মত অথোরিটি মৈনাক বা কবীরের নেই। ভালোই হয়েছে নেই...

নীলেশ আর সতীশ... দুটো ছেলেকে আর খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না রেসর্টে। এই কথাটা কি অন্যদের জানা উচিৎ? অপ্রতিমদা আর কৃষাণুদার মত সিনিয়রদের? কবীরের মনে হল, মৈনাক সেভাবে খুঁজেই দেখেনি। এত রাতে দুজনের কথা জনে জনে জিজ্ঞেস করায় সন্দেহ বাড়ে, তাই দোষ দেওয়াও যায় না। কিন্তু দুটো ছেলে রেসর্ট থেকে বেড়িয়ে কোথাও চলে গেল, বাইরের গেটের ওয়াচম্যানরাও দেখতে পেল না? অন্য কোনো রাস্তা দিয়ে, পেছন দিকের পাঁচিল টপকে পালাল? 'ইতনা ডেসপারেট? হোয়াই?... খালি ঘবড়াহাট, ইয়া ডর সে ভাগ গয়ে দোনো? ইতনে রাত গয়ে... আননোন এরিয়া মেঁ?'
      মানুষ সেরকম সংকটের পরিস্থিতিতে পড়লে, মরিয়া হয়ে এমন অনেক রকম সিদ্ধান্ত নিতে পারে... এমন অনেক কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে, যা অন্য সময়ে তার পক্ষে করা সম্ভব না। কেউ বিশ্বাসই করবে না, যে সে করেছে। নেহাৎই নিরীহ গ্রাম্য মহিলা, খর কাটার খুরপি দিয়ে কারো গলা কেটে দিয়েছে-- এমন ঘটনাও শুনেছে কবীর। পরিস্থিতি এমন জিনিস, বিপন্নতার অনুভূতি এমন জিনিস। কিন্তু এরা?... কিছু না করে থাকলে এমন বোকার মত কাজ কেন করল? কিছু না জেনে দুজনকে সন্দেহ করতেও সংকোচ হল কবীরের... এখানে ওরা কিছুই চেনে না, যদি সত্যিই দুজনে কোনো বিপদে পড়ে থাকে?!

'আই থিংক... রাগিনী মাস্ট বি ক্লিয়ার উইথ হার স্টেটমেন্ট। ইফ প্রত্যূষ হ্যাজ নট ডান এনিথিং রং... হি শুড নট সাফার।'
মৈনাকের কথাগুলো স্বগতোক্তির মতই ছিল, অথচ কবীরকে শুনিয়েই। দীর্ঘ নীরবতার মাঝে কথাগুলো শুনে কবীর চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল, 'কেয়া?'
এবং সাথেই সাথেই, ওর ফোন থেকে টিং করে একটা শব্দ হল। ম্যাসেজ যাওয়ার।
প্রত্যূষ তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। নেশার প্রভাবে, ঘরের আলো আর এত কথার মাঝেও ঘুম গাঢ়ই আছে।
মৈনাক বুঝতে পারল, কবীর কাউকে ম্যাসেজ করছে। কিন্তু ফোনের স্ক্রিনটা দেখা যাচ্ছে না। হয়ত মাথা কাজ করছে না বলেই, স্থূলভাবে জিজ্ঞেস করে ফেলল-- কিসকো ম্যাসেজ কর রহা হ্যায়, ইস টাইম?
কবীরও, অন্য সময় হলে কোনো উত্তর দিত না। হেসে কাটিয়ে দিত। কিন্তু এখন স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিল--
অপ্রতিমদা কো... জাস্ট ইনফর্মড হিম, টু অফ আস আর মিসিং।


--- --- --- --- ---


'মানুষ যাকে ভালোবাসে... তার থেকেও এমন আঘাত আসে, বলো?'
অন্তরার কথাগুলো শুনে ওর দিকে তাকাল ব্রততী। স্মিতার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে, সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে। পুরনো আমলের ঘর, কড়ি-বরগা আছে। সেগুলোর দিকেও তাকিয়ে থাকতে পারে। এখনো ঘুমোয়নি। ব্রততী তখনো মাঝে মাঝে চেষ্টা করে যাচ্ছে, প্রাজক্তার ফোনটা আনলক করার। আরো একবার ব্যর্থ চেষ্টা করে, ফোনটা পাশে রেখে অন্তরার উদ্দেশ্যে বলল, 'তুই জানিস কে কাকে ভালোবাসে?'
স্মিতা ব্রততীর দিকে তাকিয়ে বলল, 'ফোনটা বিগড়োলে কিন্তু আমি বলে দেব... কে করেছে!'
ব্রততী বিশেষ পাত্তা দিল বলে মনে হল, চোখ আর ঠোঁটের ইশারায় একটা 'যা পারো করো'-র মত ইঙ্গিত করে অন্তরাকে পা দিয়ে ঠেলে বলল, 'কীরে... তোর কীসের এত ব্যথা?'  
স্মিতা, অন্তরার কপালে হাত রেখে বসেছিল পা ছড়িয়ে। ব্রততীর দিকে তাকিয়ে আরো একবার অভিযোগের দৃষ্টি নিয়ে 'কী হচ্ছে কী?'-সূচক একটা ইশারা করল।
একই ভাবে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল অন্তরা, 'জানি না গো। কিন্তু আমার কেমন কষ্ট হচ্ছে এটা ভাবলে। রাগিনী তো ওকে বিশ্বাস করেই গেছিল... বলো?'
'সব সময়ে সবাইকে কি বিশ্বাস করতে হয়? করা উচিৎ না করা যায়?', একটু কড়া ভাবেই কথাগুলো বলল ব্রততী। অন্তরা কোনো উত্তর দিল না কথাটার। স্মিতা চোখ বন্ধ করে খাটের গায়ে ঠেস দিয়ে বসে রইল। একেবারেই চায় না এই কথার মাঝে পড়তে। ব্রততীই আবার বলে উঠল,
- তোর কী মনে হয়, এই প্রত্যূষ, ভিভান... এরা খুব বিশ্বাস করার মত ছেলে?
-
- ভুল লোককে বিশ্বাস করার দামও মানুষকে দিতে হয় অন্তরা। সবাইকে দিতে হয়, কখনো না কখনো...
- যেমন রাগিনীকে দিতে হল।
-
- ওকে সত্যিই রেপ করেছে?
- কী করেছে, সেটাই তো জানার চেষ্টা করছি! প্রাজক্তা জানে... কিছু একটা ও জেনেছে। বলছে না।
- ছেলেটা এতটা ডেসপারেট?
- ক্রিমিনাল  মাইন্ড অনেক রকম হয়... নিউজে দেখিস না? সিরিস আর ক্রাইম ডকুমেন্ট্রিগুলো দেখিস না?
- এসবের মাঝে... এমন কিছুর মাঝেও যে পড়ে যাব কখনো...
- কেউই ভাবে না। বোকা বোকা কথা!
- তোমাদের ভয় করছে না?
- ভয়? ধর প্রত্যুষ এসব করেইনি... অন্য কেউ করেছে! আর সে আমাদের ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে সব শুনছে এখন!

'এবার একটা ঠাস করে চড় খাবি, জানিস তো?', ধমকের সুরেই বলে উঠল স্মিতা। ও উপস্থিত সকলের থেকেই বড়ো, সহকর্মী হলেও এই ভাবে চড়চাপড়ের কথা বলেই থাকে। মাঝে মাঝে হালকা চালিয়েও দেয়। ওর সেই অধিকারটা এতদিনে এসে গেছে। অপ্রতিমের মত প্রভাবশালী সিনিয়র না হলেও, ভালোবাসায় মেয়েগুলোর কাছে অনেক আপন।

'তুমি কেন গেলে না স্মিতা দি? তুমি গেলে তো অনেক কিছু জানতে পারতে। আমরাও খবর পেতাম।'
স্মিতার দিকে তাকিয়ে শুয়ে শুয়েই জিজ্ঞেস করল অন্তরা।

' বলেছে আমাকে যেতে?... আর গেলে, এখানে তোদের কে দেখত?' স্মিতার উত্তর সংক্ষিপ্ত হলেও, তার মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ ছিল। ওই ক্ষোভের রেশ টেনেই ইচ্ছে করে ব্রততী বলল, 'তুমিই কিন্তু রিলাকট্যান্ট থাকো... এতটা ইনডিফারেন্ট থেকো না... জানো তো? ইয়ু ডিজার্ভ আ লট মোর।'
- জানি... কিন্তু এদের সামনে নেচে অ্যাটেনশন পেতে পারব না ভাই... সরি।
- সবাই কি নাচছে নাকি? সে তো তুমিও আজ সন্ধ্যেবেলায় ভালোই নাচলে সবার সঙ্গে!
- তুই ঠিকই বুঝেছিস কী বলতে চাইলাম।
- ইয়েস অ্যান্ড নো... যাক গে। আমার কোনো অ্যাটাচমেন্ট নেই, আলাদা করে ফর অ্যান্ড এগেন্সট ভাবারও নেই। বাট আই অনেস্টলি ফীল... ইয়ু শুড থ্রাইভ ফর বেটার।
- অফ টপিক, আমার এবিলিটি আমি জানি। এরা যদি অ্যাকনোলেজ না করে, অন্য কোথাও চলে যাব। সিম্পল।
- অফ টপিক কেন? ঠিকই বলেছ। যোগ্য সম্মান না পেলে, কেনই বা পড়ে থাকবে!
- সেই...
- কিছু মনে করো না। আসলে কিছুলোকের মাতব্বরী নেওয়া যায় না। অফিস স্পেস ইস স্টিল সো মিসোজিনিক!
- একটা সময়ে অফিসে কত শতাংশ মহিলাকর্মী আছে, আগের বছরের চেয়ে ফিমেল স্টাফ কত বেড়েছে... এইসব শুনতাম এইচআর-দের থেকে... এই নারী দিবস টাইপের দিনগুলোতে বেশি করে... নিউজ লেটার আসত। এই ক বছর ধরে সেসব স্ট্যাট্‌স্‌ আর দেখি না।
- এইচ আর, আর ফিনান্স ছাড়া আর কোথাও আছে মেয়েরা হাইয়ার পজিশনে?
- এমন ভাবে বললি... এইচ আর, আর ফিনান্স...
- ঠিকই তো...
- তুই প্রথমে আমাকে নিয়ে পড়লি, তারপর মেল ডমিনেটেড ব্যাপার, তারপর এদের... ভালো মাইন্ড-ম্যাপ।
- তুমি বলেই এত কিছু বলে ফেলি মাঝে মাঝে... বাকি সব বাল...
- যাক গে... ছাড়! এইসব প্রাইভেট কম্পানিতে কেউ কারো না। যেখানে বেটার অপরচুনিটি... চলে যেতে হবে।
- একদমই তাই।
- আর পার্সনাল বন্ডিং? ওটা দুরকমের। একটা সত্যিই বন্ডিং... জব সুইচ করলেও সে যোগাযোগ থাকে। আর অন্যটা সিমবায়োসিস। রেফার-টেফার করার দরকার হলে, ওপেনিং আছে কি না... এইসব সময়ে মনে পড়ে লোকজনের। আর আমাদের তো একটা নিজস্ব বাঁশ থাকেই... সব মেয়েদের।
- ফ্যামিলি।
- বিংগো!

'হ্যাঁ রে অন্তরা... মাথা ব্যথা করছে? হাফ প্যারাসিটামল দেব?' ইচ্ছে করেই, এই অফিসের প্রসঙ্গ থেকে বেড়িয়ে আসতে অন্তরার থেকে ফিরে গেল স্মিতা। অন্তরা ওদের কথাগুলো চোখ বন্ধ করেই শুনছিল, এইসব চিন্তা এখন ওর মনে জায়গা পাচ্ছে না। অন্য কিছু মনে পড়ছে। ব্যক্তিগত মুহূর্ত আর আঘাতদের কথা। মনে হচ্ছে-- বিশ্বাসের সঙ্গেই ছায়ার মত ঘোরে আঘাত। এটাই নিয়ম। স্মিতাদির কথা শুনে ও শুধু অস্ফুটে বলল-- ' না না... এখন ওষুধ খাব না।' চোখ বন্ধ করে আছি, আলোটা নিভিয়েই দাও। ঘরটা অন্ধকার থাকলে আর একটু চুপচাপ থাকলে ঠিক লাগবে।'
খুব নম্রভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করল, আর কথা বলতে বা শুনতে ভালো লাগছে না। সকলে চুপ থাকলেই ভালো হয়।
ব্রততীও 'সেই ভালো' বলে আলোটা অফ করে দিয়ে  আবার প্রাজক্তার ফোনটা হাতে নিয়ে বসল অন্ধকার ঘরে। আর কাকতালীয় ভাবেই এইবারের চেষ্টায় প্যাটার্ন লকটা খুলে গেল প্রাজক্তার ফোনের পর্দায়। মুখ দিয়ে সাফল্যের উল্লাস বেড়িয়ে আসছিল, কিন্তু  আওয়াজটা চেপে গেল ব্রততী। দ্রুত দেখার চেষ্টা করল টায়রা বা অনশুর থেকে কোনো ম্যাসেজ এসেছে কি না! টায়রার থেকেই এসেছে শেষ ম্যাসেজগুলো, তার কয়েকটা লাইন পড়তে পড়তেই ব্রততীর মুখচোখ অন্যরকম হয়ে গেল। ও স্মিতাকে একটা আসতে ঠেলা দিয়ে ফিসফিস করে বলল, 'স্মিতাদি!', তারপর ওর চোখের সামনে তুলে ধরল মোবাইল ফোনের স্ক্রিনটা।
স্মিতা স্পষ্টই পড়তে পারল, ইংলিশ হরফে লেখা টায়রার  কথাগুলো। ওর মুখচোখ থমথমে হয়ে গেল কথাগুলো পড়ে।
আর ঠিক তখনই, ঠক করে একটা শব্দ হল দরজায়। ওদের দুজনেরই খেয়াল নেই, কিছুক্ষণ আগে বারান্দাটা আর একবার দেখতে বাইরে গেছিল ব্রততী, ফিরে এসে আর দরজাটা ভেতর থেকে ভালো করে বন্ধ করা হয়নি।(চলবে...) 

 ©জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

পোস্টার : ত্রিবিন্দু



Comments

Popular posts from this blog

অনিন্দ্য সরকারের গুচ্ছ কবিতা : গান ছুঁয়ে ছুঁয়ে

অয়ন হালদারের পাঁচটি কবিতা

মুন্নী সেনের গুচ্ছ কবিতা : সম্বোধন