Posts

ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ —পর্ব ১২ : জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

Image
ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ: পর্ব ১২ - কী ব্যাপার, ফোন তুলছিলে না কেন? - আরে চোখ লেগে গেছিল... বুঝতে পারিনি। - চোখ লেগে গেছিল মানে? তোমেক কি এমনি এমনি পাঠালাম ওখানে? - - যাক গে! এখন কী সিন বলো। - খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না। - মানে? - মানে, একটু আগে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল... একটা মেয়ে একা বেরিয়ে যাচ্ছিল নার্সিং হোম থেকে। - কে বেরিয়ে যেতে চাইছিল? কী বলছ ঠিক করে বলো! - আরে অন্য মেয়েটা, রোগা মত যেটা। - যে অজ্ঞান হয়ে গেছিল তার কী অবস্থা? - বুঝতে পারছি না ঠিক, এখনো তো ভেতরেই আছে। - মানে? তুমি ভেতরে থাকছ না? - গেছিলাম তো বার দুয়েক, তোমাকে তো জানালাম তখন। - তাহলে? থাকতে দিচ্ছে না নাকি? - না... ডাক্তারই বেশি লোক ঘরে থাকতে দিচ্ছে না। - ঘরের ভেতর থাকতে হবে না, নার্সিংহোমের ভেতরে থাকো। চোখে চোখে রাখো... এত করে বলে দিলাম, এত বার বুঝিয়ে দিলাম... কী যে করছ গিয়ে! এর চেয়ে আমি নিজে গেলেই ভালো হত। ধোর! - আমি যাচ্ছি এখন একবার। জানাচ্ছি তোমাকে। - দয়া করে ওদের সামনে ফোন করো না। - আচ্ছা - আর শোনো... - কী? - কতটা সিরিয়াস কেস জানিও। অন্য গেস্টরা আছে। চাপ হয়ে যাবে সকালে ব্যাপারটা অন্য দিকে গেলে। - ঘাপলা তো ...

চকোলেট কথা : সোহম ভট্টাচার্য্য

Image
চকোলেট কথা   অতীতের চকোলেটের সঙ্গে আজকের দিনের চকোলেটের মিল খুবই কম । ইতিহাস জানান দেয়, অতীতে চকোলেট কোন মিষ্টি ও ভক্ষণযোগ্য নয়, বরং ছিল তিতা স্বাদের উৎসবের পানীয় । প্রাচীন মায়া সভ্যতায় যুগেও ছিল চকোলেট এর অস্তিত্ব । এমনকি তারও আগে, দক্ষিণ পূর্ব মেক্সিকোর প্রাচীন ওলমেক সভ্যতায় এর প্রচলন ছিল বলে খাদ্য ইতিহাস বিশেষজ্ঞদের মত । ‘চকোলেট’ শব্দটা শুনলেই মিষ্টি, ক্যান্ডি, বার ও মনোরম মিষ্টান্নের ছবি চোখে ভেসে ওঠে । তবে সুদূর অতীতের চকোলেটর সঙ্গে আজকের কোনও মিলই নেই । ইতিহাস জানান দেয়, কোকো নামের গাছের গুটি গুটি ফলগুলোর এক একটিতে প্রায় চল্লিশটির মত ‘বিন’ বা ‘শুঁটি’ থাকে যেগুলো পুড়িয়ে কোকো বিন তৈরি হতো।  যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোনিয়ার ন্যাশনাল মিউজিয়াম এর কালচারাল আর্ট কিউরেটর হায়েস লাভিস জানান, খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ থেকেই প্রাচীন ওলমেক সভ্যতার মানুষেরা নৌ যান ভরে কোকো ফল নিয়ে আসতেন ।  ধারণা করা হয়, ওলমেকরা, তাঁদের ধর্মীয় উৎসবে কোকো বিনগুলি সাজিয়ে রাখতেন দেবতার প্রতীক বা (totem) এর সামনে । মায়া সভ্যতায় ওলমেকরাই সম্ভবত এই কোকোর ব্যবহারকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন । ...

সহেলী সেনগুপ্তের অণুগদ্য গুচ্ছ

Image
একে তো ফাগুন মাস, দারুণ সময়... ফেব্রুয়ারি হাওয়ায় মনটা বসন্তবৌরি হয়ে যায় কেমন ঝুপুস করে। খোলামকুচির মতন, শিমুলতুলোর মতন, পায়রার পালকের মতন হাল্কা হয়ে গিয়ে দমকা হাওয়ায় উড়তে থাকে বেমক্কা। লাগাম পরে না কিছুতেই। কাজ করে না কিচ্ছুটি। অদৃশ্য খোঁপায় কল্কে ফুল গোঁজে। আলো-আঁধারি গলিতে উপুড় করে ঢালে মুঠোরোদ্দুর। আকাশনীল, আর শ্যাওলা সবুজ, আর মেঠো মেটে রংসাজের কবিতার নতুন বইয়েদের ওমে মুড়ে রাখে নিজেকে। গত শীতে যে তাকে ভেঙে ফেলেছিল, দুমড়ে ফেলেছিল, উপড়ে ফেলেছিল প্রায়, তাকে একফালি নতুন শিকড় ধার দিয়ে আসে হাসতে হাসতে। তার অরণ্যপ্রাণে যে শুধু কুঠার বিছিয়ে দিয়ে গেছে, তাকে নিঃশেষে ক্ষমা করে দেয়। ঈশান কোণ থেকে ধেয়ে আসা নিম্বাসমেঘের মত ওজনদার আঘাত তার পথে বিছিয়ে দিয়েছে যারা, তাদের মনে করিয়ে দেয় যীশুর ডাকনাম। পঙ্কিল জলে দাঁড়িয়ে যারা কাদা ছোঁড়ে ক্রমাগত, তাদের অনতিদূরে রেখে যায় ভোরের বেলার ফুল। আয়ুরেখা ধরে হাঁটতে থাকা যে বিগতযৌবন, ক্লান্ত রাজপুত্র তার অভিশাপসমান অমরত্বের বর ফিরিয়ে নেওয়ার প্রার্থনা করে রোজ ঈশ্বরের কাছে, তার বলিরেখায় ভরা বিষণ্ণ হাতে দেয় কোনো এক দুঃখী রাজকন্যার কবরের উপর ফুটে থাকা বেগনি...

ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ : পর্ব ১১ — জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

Image
ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ: পর্ব ১১  এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস এসে মাঝে মাঝেই কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। অথচ ঘরের ভেতরটা এমনিতে আরামদায়ক। ঘরের এক কোণে একটা জায়গায় আগুন জ্বলছে, ফায়ারপ্লেসের মত। তার ওপর শিকে গাঁথা মাংস ঘুরছে। নিজে থেকেই ঘুরে যাচ্ছে। কীসের মাংস ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তবে পাখির না। কোনো ছোটো চতুষ্পদ প্রাণী। পরিবারে সকলেই শাকাহারী, কে এভাবে মাংস ঝলসাচ্ছে ঘরের ভেতর? মাংস পোড়া গন্ধটা ধোঁয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। মনে হল, এখনই কাউকে ডেকে বলে ওটা ঘরের বাইরে নিয়ে যেতে। কিন্তু কাকে বলবে বুঝতে পারল না। দেখল দুটো লোক ক্যারম খেলছে বসে। ঘরে এত কম আলো, যে তাদের মুখ আলাদা করে চেনা গেল না। কিন্তু মনে হল খুব পরিচিত কেউ, অথচ...      ঘরে এই অন্ধকার ভাবটা, এই হালকা ধোঁয়া, অল্প-আলোয় দেখা দেওয়ালের ইট বেরিয়ে আসা ইন্টেরিয়র... হুক্কা বারগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। হুক্কাবারের কথা মনে পড়তেই একটা মিষ্টি গন্ধ ভেসে এলো, মাথা ভারী করা হুক্কার ধোঁয়া? এমনি সময়ে সিগারেট না খেলেও বারে এলে হুক্কার নল নিয়ে বসে থাকতে একটা মজা আছে। অথচ চারপাশে তাকিয়ে সেই আসল জিনিসটাই দেখা যাচ্ছে না।  ঘরে কেবল দুটো মানুষ...

মৈনাক দাসের গুচ্ছ কবিতা

Image
  দু'বছর         এতদিনের আলাপ শুকনো বটগাছ প্রেম, আসতে আসতে  পাথর বাটি জমা ছাই— বছর গেছে...  পথ অতিক্রম  আরো কিছু আমার বলা হয়নি  বেশি কথা। দেবীমাহাত্ম্যম্          এই প্রথম জিজ্ঞেস করি জন্ম কী ভাবে হয় ?  কী অপূর্ব জাল  ছিঁড়ে খেয়েছে মশারি  মশাগানে'র সারেগামা মা শেখায়— শিখি , দেখি  শুশ্রূষা মাধ্যাকর্ষণ ছাড়ায়...  দূরে ভেসে আসে  গান নয়, আশা নয়....  চলছে দেবীমাহাত্ম্যম্  হেঁটে যাচ্ছে অবেলা রূঢ়ভাত  যাচ্ছে জিহ্বাকৃত আশীবিষ.... পোস্টার         পাখার আলো, আলোর হাওয়া সব দেখতে দেখতে ছিন্ন হয়ে যাই কিছু বলার থাকে না,  আটকে গেলে বলতে যাই  বলতে গেলে বলা হয় না আর কিছুই...  © মৈনাক দাস অঙ্কন: ঋতুপর্ণা খাটুয়া

অমিত পাটোয়ারীর গুচ্ছ কবিতা

Image
১ ব্যাঘ্রচন্ডী, আইসো সকালে। সুতীব্র অনল পথে...   এখনো বলোনি কেন বৃক্ষদানবেরে, সঙ্গী তাঁরে চাও?  কালোপ্রিয়, শৈশবালোক চির অভিলাষী!  প্রতিমুখ দেখে মেহেরবান, সমঅন্তে বাক্য একই;  ভুল রেখে কেন ফিরে আসো?  আমূল বদলে যাওয়া এ ভূলোক বেড়াহীন রাখি আজ,  তুমিমুগ্ধ প্রাণ এসে খেতে পাক।  তোমার অসুখ নিয়ে তাদের ভ্রমণ বুঝি এইবার চন্দ্রপথ হবে!  আমি হাঁটি। মাটি নেই, বায়ু নেই, জল...  রোদ মেখে যে যুবক আকাশ খুলেছ, চেনা মুখ;  তুমি যে দান করেছ ওরে, অমৃতকণা—  কৃতজ্ঞ আমি, তোমার দেবতারে নিজমাংসে ভোগ দিতে চাই।   ২ পথ নেই আর কোনও, ফিরে যাওয়া...    তোমারে না লেখা দিন পৃথিবীতে কেমন ঘনাবে, সে কথা  আশ্চর্য ধবল ফড়িং! জন্মসময় নুলো; জন্মের কবজি থেকে একটি কাটা হাত ঝুলে আছে                                   ... আঙুল চ্ছিন্ন হওয়া অন্য হাত আগের ঔরস আমার, ইতিপূর্ব ঈশ্বর—  এ সমস্ত ফেলে রেখে শিশুসঙ্গ, রমণীপথ তবু!  যে দ্রোণ শীতল, সে কন্...

অরিত্র দ্বিবেদীর গুচ্ছ কবিতা : ১৩ পার্বণ

Image
১৩ পার্বণ ১ ভালো আছো? উত্তরের অপেক্ষা করিনি। ২ খুঁটে খাব, জীবন! আমি তো পাখি নই। ৩ কালবৈশাখী কাঁপছিল দূরে  আমার হাতে ধরা ছিল কিছু আশুত পাতা। ৪ কাল ঘুমিয়েছ একমনে। তবে, স্বপ্নে কেঁপে কেঁপে উঠছিলে কেন? ৫ উদাসী হাওয়ার বিকেল। স্টেশনে একটাও লোক ছিলনা। ৬ শুকিয়ে গেছে, কাঁটার খোঁচা, বুকের দাগ "ডিপ্রেশনের বাংলা জানি, নিম্নচাপ!" ৭ তোমার কেনা বইয়ে মুখ ডোবালাম তুমি লাইব্রেরির দিকে উঠে চলে গেলে। ৮ জঙ্গলের মাঝে থমকে দাঁড়ালে; 'হ্যাঁ, আমিই ডেকেছি তোমায়'। ৯ খাটে কয়েকটা শব্দ ছড়িয়ে আছে। খাতায় লেখা শব্দদের দলে তোমার মুখটা হারিয়েছি। ১০ লেখা কবিতার ওপর শকুন এসে বসল। কবি একটা দীর্ঘশ্বাসে ellipsis বসালো। ১১ মানুষ চেনার বদ অভ্যাস আমার নেই, জানো? শুধু অ্যান্ডি ওয়ারহোলের ছবিতে তোমার একটা মুখ দেখেছি। ১২ কথার পিঠে কথা নয় অপেক্ষা লেগে থাকে। ১৩ মানুষ থেকে ছিটকে এসে আমি আর বাস্তবতা মুখোমুখি বসি। হাতে ধরে ওকে ভাবতে শেখাই। আমার কাঁধে মাথা রেখে, কান্নায় ভেঙে পড়ে ও। © অরিত্র দ্বিবেদী অঙ্কন : ঋতুপর্ণা খাটুয়া                  ...