Posts

ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ : পর্ব ১১ — জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

Image
ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ: পর্ব ১১  এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস এসে মাঝে মাঝেই কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। অথচ ঘরের ভেতরটা এমনিতে আরামদায়ক। ঘরের এক কোণে একটা জায়গায় আগুন জ্বলছে, ফায়ারপ্লেসের মত। তার ওপর শিকে গাঁথা মাংস ঘুরছে। নিজে থেকেই ঘুরে যাচ্ছে। কীসের মাংস ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তবে পাখির না। কোনো ছোটো চতুষ্পদ প্রাণী। পরিবারে সকলেই শাকাহারী, কে এভাবে মাংস ঝলসাচ্ছে ঘরের ভেতর? মাংস পোড়া গন্ধটা ধোঁয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। মনে হল, এখনই কাউকে ডেকে বলে ওটা ঘরের বাইরে নিয়ে যেতে। কিন্তু কাকে বলবে বুঝতে পারল না। দেখল দুটো লোক ক্যারম খেলছে বসে। ঘরে এত কম আলো, যে তাদের মুখ আলাদা করে চেনা গেল না। কিন্তু মনে হল খুব পরিচিত কেউ, অথচ...      ঘরে এই অন্ধকার ভাবটা, এই হালকা ধোঁয়া, অল্প-আলোয় দেখা দেওয়ালের ইট বেরিয়ে আসা ইন্টেরিয়র... হুক্কা বারগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। হুক্কাবারের কথা মনে পড়তেই একটা মিষ্টি গন্ধ ভেসে এলো, মাথা ভারী করা হুক্কার ধোঁয়া? এমনি সময়ে সিগারেট না খেলেও বারে এলে হুক্কার নল নিয়ে বসে থাকতে একটা মজা আছে। অথচ চারপাশে তাকিয়ে সেই আসল জিনিসটাই দেখা যাচ্ছে না।  ঘরে কেবল দুটো মানুষ...

মৈনাক দাসের গুচ্ছ কবিতা

Image
  দু'বছর         এতদিনের আলাপ শুকনো বটগাছ প্রেম, আসতে আসতে  পাথর বাটি জমা ছাই— বছর গেছে...  পথ অতিক্রম  আরো কিছু আমার বলা হয়নি  বেশি কথা। দেবীমাহাত্ম্যম্          এই প্রথম জিজ্ঞেস করি জন্ম কী ভাবে হয় ?  কী অপূর্ব জাল  ছিঁড়ে খেয়েছে মশারি  মশাগানে'র সারেগামা মা শেখায়— শিখি , দেখি  শুশ্রূষা মাধ্যাকর্ষণ ছাড়ায়...  দূরে ভেসে আসে  গান নয়, আশা নয়....  চলছে দেবীমাহাত্ম্যম্  হেঁটে যাচ্ছে অবেলা রূঢ়ভাত  যাচ্ছে জিহ্বাকৃত আশীবিষ.... পোস্টার         পাখার আলো, আলোর হাওয়া সব দেখতে দেখতে ছিন্ন হয়ে যাই কিছু বলার থাকে না,  আটকে গেলে বলতে যাই  বলতে গেলে বলা হয় না আর কিছুই...  © মৈনাক দাস অঙ্কন: ঋতুপর্ণা খাটুয়া

অমিত পাটোয়ারীর গুচ্ছ কবিতা

Image
১ ব্যাঘ্রচন্ডী, আইসো সকালে। সুতীব্র অনল পথে...   এখনো বলোনি কেন বৃক্ষদানবেরে, সঙ্গী তাঁরে চাও?  কালোপ্রিয়, শৈশবালোক চির অভিলাষী!  প্রতিমুখ দেখে মেহেরবান, সমঅন্তে বাক্য একই;  ভুল রেখে কেন ফিরে আসো?  আমূল বদলে যাওয়া এ ভূলোক বেড়াহীন রাখি আজ,  তুমিমুগ্ধ প্রাণ এসে খেতে পাক।  তোমার অসুখ নিয়ে তাদের ভ্রমণ বুঝি এইবার চন্দ্রপথ হবে!  আমি হাঁটি। মাটি নেই, বায়ু নেই, জল...  রোদ মেখে যে যুবক আকাশ খুলেছ, চেনা মুখ;  তুমি যে দান করেছ ওরে, অমৃতকণা—  কৃতজ্ঞ আমি, তোমার দেবতারে নিজমাংসে ভোগ দিতে চাই।   ২ পথ নেই আর কোনও, ফিরে যাওয়া...    তোমারে না লেখা দিন পৃথিবীতে কেমন ঘনাবে, সে কথা  আশ্চর্য ধবল ফড়িং! জন্মসময় নুলো; জন্মের কবজি থেকে একটি কাটা হাত ঝুলে আছে                                   ... আঙুল চ্ছিন্ন হওয়া অন্য হাত আগের ঔরস আমার, ইতিপূর্ব ঈশ্বর—  এ সমস্ত ফেলে রেখে শিশুসঙ্গ, রমণীপথ তবু!  যে দ্রোণ শীতল, সে কন্...

অরিত্র দ্বিবেদীর গুচ্ছ কবিতা : ১৩ পার্বণ

Image
১৩ পার্বণ ১ ভালো আছো? উত্তরের অপেক্ষা করিনি। ২ খুঁটে খাব, জীবন! আমি তো পাখি নই। ৩ কালবৈশাখী কাঁপছিল দূরে  আমার হাতে ধরা ছিল কিছু আশুত পাতা। ৪ কাল ঘুমিয়েছ একমনে। তবে, স্বপ্নে কেঁপে কেঁপে উঠছিলে কেন? ৫ উদাসী হাওয়ার বিকেল। স্টেশনে একটাও লোক ছিলনা। ৬ শুকিয়ে গেছে, কাঁটার খোঁচা, বুকের দাগ "ডিপ্রেশনের বাংলা জানি, নিম্নচাপ!" ৭ তোমার কেনা বইয়ে মুখ ডোবালাম তুমি লাইব্রেরির দিকে উঠে চলে গেলে। ৮ জঙ্গলের মাঝে থমকে দাঁড়ালে; 'হ্যাঁ, আমিই ডেকেছি তোমায়'। ৯ খাটে কয়েকটা শব্দ ছড়িয়ে আছে। খাতায় লেখা শব্দদের দলে তোমার মুখটা হারিয়েছি। ১০ লেখা কবিতার ওপর শকুন এসে বসল। কবি একটা দীর্ঘশ্বাসে ellipsis বসালো। ১১ মানুষ চেনার বদ অভ্যাস আমার নেই, জানো? শুধু অ্যান্ডি ওয়ারহোলের ছবিতে তোমার একটা মুখ দেখেছি। ১২ কথার পিঠে কথা নয় অপেক্ষা লেগে থাকে। ১৩ মানুষ থেকে ছিটকে এসে আমি আর বাস্তবতা মুখোমুখি বসি। হাতে ধরে ওকে ভাবতে শেখাই। আমার কাঁধে মাথা রেখে, কান্নায় ভেঙে পড়ে ও। © অরিত্র দ্বিবেদী অঙ্কন : ঋতুপর্ণা খাটুয়া                  ...

ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ— পর্ব ১০: জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

Image
ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ— পর্ব ১০: জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় 'একি! তুমি এখানে?' কাউকে অপ্রত্যাশিত ভাবে, অপ্রত্যাশিত স্থানে এবং সময়ে হঠাৎ দেখতে পেলে যা হয়। ঠিক এইভাবে একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য কৃষাণু একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। ক্লায়েন্ট ভিজিটে অন্য শহরে একাধিকবার গেছে। বিদেশী ক্লায়েন্টদের সঙ্গেও বিজনেস মিটিং-এ গেছে কোনো ডেলিভারি হেডের সঙ্গে। সব সময়ে সেসব সাক্ষাৎকারের গতি-প্রকৃতি যে খুব অনুকূল থাকে, তা নয়। কিন্তু এরকম কিছু ঘটবে... জানা থাকলে এখানে আসতই না কৃষাণু। একটা স্বাভাবিক দিন ক্রমে কেমন অস্বাভাবিক থেকে অস্বাভাবিকতর হয়ে উঠল। হঠাৎই রোদঝলমলে দিনে যেমন দুর্যোগ ঘনিয়ে আসে। কেন যে হঠাৎ কৃষাণুর এত বছর পর মনে হল চাকরির জন্য এই অফিসে অ্যাপ্লাই করার কথা! কাউকে না জানিয়ে... কারো সঙ্গে কনসাল্ট না করে ইন্টারভিউ দিতে চলে এলো। এমন হাইকের আর অনসাইটের প্রলোভন তো নতুন নয়! ক্যান্ডিডেটদের কেমন অস্বাভাবিক ভিড়... একটাই পদের জন্য? চেনা মুখও দেখা যাচ্ছে। সকাল থেকে এসে বসে আছে সবাই। স্ক্রিনিং আর প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ভেতর থেকে মুখোমুখি সাক্ষাৎকারের ডাক আসেনি তাদের। কেউ কেউ ফাইল দিয়ে ম...

মহিউদ্দিন সাইফের গুচ্ছ কবিতা

Image
বঙ্গভাষা সংবাদ জাড়ের সন্ধ্যায় আগুন তাপার কালে জঙি বাউরির কাছে একদা বঙ্গলিপির কথা, শুনেছিলাম। অবাক্যি কালিহাঞ্জি সাঁঝ কাঁজি-আলোতে শুধু দেখা যাচ্ছে তাঁর মুখ বৃহদ্ধর্মবর্ণিত সেই গূঢ় নাক ও চোখ একটি আবহমণ্ডলকে রচনা করছে। লিপিকালের বঙ্গভাষায় একটি পদের ধূয়া তুললেন তিনি, বোঝালেন এ কদাপি অর্ধম্লেচ্ছ চর্যাগীতি নয় এর সাথে মিল আছে বায়ুরুৎম, পুষ্করশারী ও মহোরগ ভাষার কিছুকিছু এবং প্রাচীন পাখুড়ির লাহান ধ্বনি দিয়ে তিনি একটি ভাবকেও জাগালেন এভাবে মধ্যবর্তী বায়ুস্তর গাঢ় হয়ে একটি নীলাভতম দুনিয়া পয়দা হল মাঝের মান্দার আগুনকে চকিতে মনে হল জন্মপলের মিহির আর আমরা নীহারিকাপুঞ্জের মাঝে বসে আছি তবুও আমার গুমান আর যায় না কিছুতে বিভিন্ন অপূর্ণ বাক্যে তাঁর কাছে ভেদ জানতে চাইলাম বিবিধ কূটধ্বনি যা স্মরণে এল ব্যবহৃত হল একে একে অগত্যা, কথাপ্রসঙ্গে তিনি লাল্হ দেশ ও মহাস্থবির কালিকের কথা শোনালেন, একিন এল, তিনি সত্যই বঙ্গভাষায় কথা বলিতেছেন… --------------------- ধ্যান ভেঙে তোমার থেকে সরে ভাবি 'সাফাইরা'র ধ্যানে ডুবে যাব, তুমিও আচকা ব্যথা, অনহা সুফি থেকে বাউন-বালিকা হবে ফের, আর পায়ের নেউর রইবে পড়ে, প্রার্...

ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ: ৯ম পর্ব — জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

Image
ভালো থেকো নিশীথ অবশেষ — ৯ম পর্ব   ‘যা,ফ্রেশ হো কর আ… লেডিজ ওয়াশ রুম ইজ দ্যাট ওয়ে…নট ব্যাড, ম্যানেজেবল।’ কথাগুলো অনশুকে বলতে বলতেই রাগিনীর পায়ের কাছে বেডের ওপর বসল টায়রা, হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিল 'দ্যাট ওয়ে'টা কোন দিকে। অনশু এক মনে ফোনে কিছু টেক্সট করছিল, 'দ্যাট ওয়ে'-টা ও খেয়ালই করল না। টায়রার গলার আওয়াজ পেয়ে মাথা তুলে বলল ‘হুম?’ বেচারাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, খুব চাপে আছে। টায়রা কিছুটা নিজের দায়িত্বেই মিথ্যে বলল ওকে, ‘অপ্রতিমদা সে বাত হুয়া, মৈনাক অ্যান্ড ভিভান আর  অন দি ওয়ে… সামওয়ান উড টেক আস ব্যাক টু দ্য রিসর্ট।’ - অওর রাগিনী? - বো ভি চলেগি না… গার্লস্‌ সব চলে যায়েঙ্গে! - হোয়াই ওনলি গার্লস্‌? - আই মিন, হম লোগ পহলে যায়েঙ্গে, দেন আদার্স উড ফলো। - তু কুছ ছুপা রহি হ্যায় না মুঝসে? হোয়্যার আর আদার্স? হোয়াই আর এভরিওয়ান সো কোয়েট? হোয়াই আর উই স্টিল হিয়ার? -শ্‌শ্‌... কাম ডাউন। রিল্যাক্স। অ্যায়সে প্যানিক করেগি তো ইট উড ডেফিনিটলি অ্যাফেক্ট ইয়োর হেলথ। - আই অ্যা নট প্যানিকিং... শিওর উই আর ইন সাম মেস... অওর বো তুঝে ভি পতা হ্যায়। ইউ আর জাস্ট ট্রাইনিং টু পেসিফাই মি নাও। - - দেখ...