অমিতাভ সরকারের গুচ্ছ কবিতা
মনোকর্ণিকা
আকাশে জোয়ারভাটা আবরণ
যুদ্ধ এ মন চলে মেঘনাদ।
স্বভাবে অভাব লাগা গ্রহণে
খাওয়া দাওয়া সবটাই ওষুধই।
আচারের অনাচারে পৃথিবী
রোদ ঝড় বৃষ্টিতে ঝামেলা
রাতভোর গায়ে জামা এ শীতে।
ঠান্ডাটা বেশ বেশি এখানে
অসুখে না প্রাণ মান দুই যায়;
জীবন গভীর ভাব আভাসে
ঘুমটা দেরি সে এলে ক্ষতি কি!
আমির জবানবন্দি
হারিয়ে যাচ্ছি। আমাদের পথ চলা তোমায় দেখে থমকে দাঁড়ায়। কথা বলতে গিয়ে কিছু ভাবে।ভুলগুলো হুলস্থূল করে পাহাড়ের দূর উপত্যকা।পাড়ি দিই ভাবনার খুশি জলতল। গভীরতা এইখানে অনেকই। হেরে গিয়ে জিতে ফেরা এ বিজন ভালোবাসা উলুবনে মুক্ত ছড়ায়।
চাওয়া পাওয়া তবু শেষ হয় না। ফিরে আসি তুমি-আমি বারবার। সব দিয়ে কিছু পাওয়া যায় না।
জীবনের এই খোঁজ অধরা।
কালান্তরের অস্তরাগে
যাপনার রঙ্গমঞ্চে আজকে নাটকের শেষ দিন।
হল ভর্তি দর্শক,শো হাউজফুল। সব টিকিট নিঃশেষিত। আসা, দেখা, পাওয়া না-পাওয়ার পাগলা ঢেউয়ের আসমানী দীঘল জলস্রোতে বইয়ের পাতাগুলো বেশ ভারী লাগছে,কথা বলছে বিকেলের রোদ খোলা কামনার শুষ্ক মেঠো বাতাস,হাত ধরছে আনন্দের পোশাকি উপকরণ,সময় নামছে আবার পথের ক্লান্ত ঘাটে।নৌকা ছাড়বে বলে...।
সবাই উঠে গেছে। শুধু লেখককে আর পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্বেষণ
একটা ঘর চাই
যেখানে থাকবে মনের নিবিড় আনাগোনা,
স্তব্ধতার স্তবে সাধনার খুশি আলিম্পন,
সবুজ মাটির ঘাসে শৃঙ্খলতার দোলা,
হৃদয় আকাশ পারে শতাব্দীর চৈতন্য উদারতা।
বাড়ি তো অনেক আছে ধূসরতা স্তোক মাখা এ শহরে,কিন্তু একটাও ঘর খুঁজে পাচ্ছি না।
জীবন একলা ভারে প্রাণের জড়তা-ভাব
মুক্তির মেঘ বার্তা।
চলুন এগিয়ে যাই ওখানে...
স্কুল তো খোলাই আছে।
সময়ের মেঘমিনারে
এখন গভীর কাল।এই সবে সন্ধ্যা নামলো।
একাকী মনের মেঠো হাওয়াটা আজ বেশ গরম। বেলা বাড়তেই রোদ নামে আকাশে রোজকার বেহাল যাপনার রুদ্ধ বিষণ্ণ একতারায়। দিনান্তের ঠাণ্ডা গার্হস্থ্য কলহ, দ্বন্দ্ব সবই পাত পাড়ে এই নিঠুর বেলায়। কথায় কথা বাড়ে। সময়ের বৃষ্টিতে মাটি ভেজে না। জমিটা একলা পড়েই থাকে অনেকটা দিন ধরে। মেঘেদের সাপলুডো গুটি খেলা অসময় ভাতের থালায় কোত্থেকে উড়ে এসে জড়ো হয়।সবকিছু ঠিক তবু এমনই।
বাইরে দেখে কিছুই বোঝা যায় না। এখানে কারোর কিছু উপসর্গ নেই। অসুখটা তবু সেই ঠিকই থাকে। রোগ বাঁচে, তবে সময়ের ভাববার সময় নেই।
তোমার জন্যে
সময় অনেক পথ শিশিরে
রোজ ভেজা এ মাটির কলসে
মেঘ দিয়ে রোদে হাঁটা সেই শুরু
কবে মনে নেই।
ভাবনা সে তরলতা অভিনয়
চাওয়া-পাওয়া ঋণশোধ বিস্মৃতি
চাহনির আদি বয়সে
সম্পর্কের ঢাকা মুখ বাঁধা চেনা দুনিয়ায়
মনের দেখার পালা ক্ষণিকের
সবাই সবার মতো সুখ খুঁজে খুশি হতে চায়।
স্বার্থেরই প্রয়োজনে আমরা।
কাজ নিয়ে কথা দেখা রোববার
সবকিছু ঠিকঠাক এখানে
দেখানদারির চেনা মুখোশে
সব্বার সাথে দেখা এভাবে।
তবু,
তার সাথে আর দেখা হয় না।
© অমিতাভ সরকার
অঙ্কন: শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
Comments
Post a Comment