সৌমিত ভট্টাচার্য্যের গুচ্ছ কবিতা : অসাংসারিক
অসাংসারিক
এক
এখানে যৌনতা নেই।
দু'খানি পুরনো বাড়ির মতো নিস্পন্দ দু'টি মানুষ
দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি, বহুদিন
মাঝে গলিপথ... নির্জনতা সেখানে আরও মন্দ্র হয়ে ওঠে
ঘড়ির আয়ু বাড়লে দেখতে পাই–
সহজ আতিথ্যে যে সম্পর্কের গাছ
বেড়ে উঠেছে আমাদের মাঝে;
একদিন তার ভালোবাসার ছাপোষা ছায়াটুকু
নেমে আসে দু'জনের ছাদে,
দু'জনের মাথায়
দুই
বিধবার থানের মতো শ্বেতকায়, রাস্তাটির একপাশে
পড়ে আছে আমাদের সদ্যছিন্ন সম্পর্কের দেহ;
নিরস্ত্র, নিথর
আয়ুর জখম থেকে
ভেসে আসে রক্তাভ ঢেউয়ের বানান–
অন্যপৃথিবী যাকে, দিয়ে গেছে আলতার নাম
যার ওপর দিয়েই মৃদুপায়ে হেঁটে এলে তুমি,
হেঁটে এলে রাস্তাতে পায়ের ছাপ রেখে, আর
অদূরে কোথাও–
নতুন বউয়ের সাজে
তোমাকে বরণ করে নিচ্ছে তোমার ভবিষ্যৎ
তিন
শ্রেষ্ঠতম ভাস্করের দক্ষতায়, তোমার আদলে
পাথর ভেঙে ভেঙে গড়েছি মূর্তিটি।
কাল কেউ এই স্মৃতি নিয়ে যাবে দূরান্তে, সভ্যতায়
কারো কাছে পাবে দেবীরূপ...
শুধু আমি জানি, পাথরের বুকে ও তোমাকে
কতখানি আঘাত আমি দিয়েছি, দু'হাত–
সযত্নে রেখেছে তার ক্ষতসমূহ,
এবং সাদা-কালো চেহারার অসংখ্য প্রেত
আমার কানে কানে বলে গেছে – 'ওয়েল ডান!'
চার
আমাকে সারারাত জাগিয়ে রেখেছে
ভাষাহীন শিশুদের চোখ।
তোমাদের বিষণ্নতা, পায়ে পায়ে হেঁটে যায় দূরে
মৃতবৎ বন্দরদেহে
যেভাবে ভাঙে সব পাখিদের নীরবতা,
সেভাবেই–
একই মোহনার দিকে ভেসে যায় জাহাজ ও স্রোত, শুধু
দেবতার করপুট থেকে
আশীর্বাদের মতো, নেমে আসে শিউলির স্নান...
সমুদ্রে, তোমার
পাঁচ
প্রস্থানের পথে তুমি রেখে এলে ভুল এপিটাফ।
মৃতের দৃষ্টির মতো,
ঘাস জুড়ে স্থির হয়ে আছে তোমার শিশিরস্নেহ
আভূমি পাতার দলে... চুপিচুপি ঢুকে পড়ে শীত
নদীপথ ক্রমাগত সরে গেছে আমাদের থেকে
পথঘাট ফাঁকা হয়ে যায়
আদিগন্ত সুর তোলে ধ্বংসের গান
ঝড় আসে, ঝড় আসে আরও—
নবজন্ম, তুমি শুধু খুঁজে নিও
আমাদের ভিত্তিপ্রস্তর
ছয়
আমাকে মনে রাখা এবং না-রাখার মধ্যে
নিঃশ্বাস ফেলে বৈধব্য
চৌকাঠে, দাওয়ায় এসে পড়ে বন্ধুবৎসল রোদ
অনন্ত মৃত্যুর মাঝে, শুধু তুমি ছুঁলেই মনে হয়–
বেঁচে আছি
বেঁচে আছি, উঠোনের ধুলোবালিদলে
নিঃস্ব তুলসীতলাটি তোমার হাতেই সন্ধ্যারতি পেলে
পেয়ে যায় সমস্ত আগুন, আদর
সলতের নীচে একা পুড়ে গেছে আমারও যাপন–
দহন তো আসলে, নতুন আলোর জন্মপ্রক্রিয়া
©সৌমিত ভট্টাচার্য
অঙ্কন: ঋতুপর্ণা খাটুয়া
Comments
Post a Comment