আনন্দী চট্টোপাধ্যায়ের দুটি কবিতা
চিরহরিৎ
দূর থেকে লক্ষ্য করছি অনেক হারিয়ে যাওয়া আর ফিরে আসার স্মৃতি। মুখবিহীন অজস্র ঝুঁকে-পড়া মানুষ হেঁটে যাচ্ছে, আর রাস্তার মাঝখানে গজিয়ে উঠেছে একটা ফুলগাছ। তুমিও একদিন আমাকে শিখিয়েছিলে, মুঠোয় ধরতে গেলেই ঝরে যায় বালি। এখন পায়ের পাতায়, আর সবুজ শিকড়ে জমা হচ্ছে লাল মাটি, কাঁকর, ধুলো। ফুলগাছের একটা ডাল দেওয়াল ভেদ করে ঢুকে পড়েছে আমার ঘরে, প্রতিদিন একটু একটু করে জড়িয়ে যাচ্ছে চামড়ায়, হাড়ে। চামড়ার ভিতরে সবুজ শিরা ক্রমে স্পষ্ট হয়ে আসছে, টের পাচ্ছি বৃষ্টি ভেজার বাসনা, রোদ গিলে ফেলার ইচ্ছে। খুঁটে তুলছি দেওয়ালের রং, একটা একটা করে ইঁট। নখ ভেঙে, বেরিয়ে আসছে রক্ত, তার রং সবুজ ও সাদা। বন্ধুরা ভয় পাচ্ছে, ভয় পেতে পেতে সরে যাচ্ছে দূরে। মাঝে মাঝে ভেসে আসছে মায়ের চুলের গন্ধ, বাবার বুকের গন্ধ, আমার চোখ বেয়ে গজিয়ে উঠছে শিকড়। শরীর থেকে ঝরে পড়ছে শুকনো পাতা, আমি এগিয়ে চলেছি আরো একটা শীতকালের দিকে।
কথা
এক একটা শীতকালে আকাশ থেকে সন্ধেবেলার প্রার্থনা শোনা যায়।
চারপাশে অজস্র মানুষের নিস্তেজ ভীড়,
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো ফুরিয়ে যাওয়া অস্পষ্ট চিত্রপট খোঁজার চেষ্টা করি।
এক একটা শীতকালে আমাদের ঘোলাটে বিকেলে কুয়াশা জড়িয়ে যায়।
পাশে বসে বন্ধুটি তার ভালোবাসার গল্প বলে,
শুনতে শুনতে আমার মধ্যে কে যেন তার মতো কথা বলে ওঠে;
আমি জড়িয়ে যাই কুয়াশার গায়ে।
© আনন্দী চট্টোপাধ্যায়
অঙ্কন: শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
Comments
Post a Comment