মাসুদ শাওনের গুচ্ছ কবিতা


সাপিনীর পদাবলী



গ্রাম জমিদারের গৃহিণী
নাকে নথ চোখের কাজল করুণা ছড়ায়
যার ভয়ে গ্রাম কাঁপে দিনে
সেও প্রতিরাতে ওই চোখে ডুবে যাবে ভয় পায়


সাপিনীকে লেখা

বন্ধুরা গুছিয়ে নিতে বলেছে জীবন
আমি বলি, অস্থির হও অস্থির

তোমার ব-দ্বীপ আলুভাতে থালুথালু আর
দাঁড়াও, সুদূরে ভাসিও না চোখ
             কোনো আশায়, স্মৃতিতে...
কাছের এ দেখায় যে সপ্রতিভ বিদ্যুৎ চমক
তাকে চকোলেট ভেবে হাসো বিস্মিত আবেগে

দেখ, দু'হাতে ছড়ানো পাতাপুতি নৈয়ের পাহাড়
উবু থাকা মেয়েটিকে ডিঙিয়ে হাঁফিয়ে গেছে।
ছড়া কাটে বুড়িপোড়া ঘরের আলোয় 
                                   কোনো বিস্মিত গাঁয়ের মেয়ে
আলতাপাটি পা পাতি বলে সে মেয়ে উঠোনে
                                            জলের বিদ্রুপে নামে

শুধু তুমি আজ ও মেয়ের বিরহে
কলকাতা নগরের সাথেই কুমিরডাঙা খেল
এত পাতা জড়ো করে জানোনি– জল গাছের দেহে
                                   অবশ পাতায়, খোদলে জমে শুধু
নগরীর বুকে কান্না জমে না।
                     করুণ ভাপ হয়ে নীল-দিকে ফিরে যায়
                                উদাসীন, অভিমানে, নিরাশায়



বারোমাস্যা

ঘুম আসে না ঘুম আসে না দৃষ্টিদাহে
বুকের ভেতর কাঁপতে কাঁপতে জলকপাটের
হদিস হারায়, হদিস হারায় কোন দরোজা
খুললে পাবো আকাশমণি

মাসের থেকে মাসান্তরে, বছর ঘোরে
এই বাগানে রাত করে না বাঘ ডাকে না হালুম হালুম
 
চাঁদ ওঠে তার মৃত্যুমুখর ছায়ায় ছায়ায়
জঙ্গলেরা নিজের শরীর খাবলে অবশ
দুঃখ আসে, সুখ জাগে আর অনুতাপে
জড়াপটির মধ্যে লুকোয় দু'চোখভরা 
                                     সর্পনাশা তরঙ্গিনী


রসভাণ্ড

একটি বিরহ বুঝতে বুঝতে 
মানুষ আরেকটি বিরহের কোলে মাথা পেতে দেয়
তার বুকের নিচে জমতে থাকে জিওলে আঠা

একটি মানুষকে আপন করতে করতে
সে অন্য একজন মানুষ বনে যায়
যার আয়নায় আপাত সবকিছু ঘোলা

নিজের ও বুকে ঝোলা কলসির শূন্য দেখে
একটি খেজুর গাছের মাথা মাটির অধিক হয়ে
আকাশের মতো লম্বা হতে থাকে

ফলে আবার নিজের অগোছালো বিচ্ছেদে
ফিরে সে বোঝে প্রতিটি আসা-যাওয়া 
একটি ক্ষত থেকে আরেকটি ক্ষতের পথে এগোনো

আর এই ভীষণ শীতের কুয়াশা ও রোদের বৈপরীত্যে
মাজায় দড়ি বাঁধা গ্রামের গাছুয়া 
পুরোনো ক্ষতের সিঁড়ি বেয়ে রসের ভাড় নামিয়ে আনে


ভায়োলিন

আহা চাঁদ, তুমিও কি
কবেকার মেয়েটির মতো নিশা আর দ্যুতি নিয়ে খেল
পূর্ণ হৃদয়ের প্রতি রাতে জলের জোয়ার আসে মনে

চকিত গ্রামের নদী যায়
অমাবস্যায় থিতিয়ে অবমাননার গোপন সোহাগে

তবে চলো, চাঁদ, আজ তোমাকে বিশ্বাস করি
হাত ধরে নিয়ে চলো 
নিয়ে চলো হিম কোনো দেশে, 
সুমেরু কুমেরু নয়, আরো কোনো সন্ধ্যা-স্থিরতায়

সারাদিন যেখানে রাত, যেখানে সারা-রাত আলো

© মাসুদ শাওন

অঙ্কন:  ঋতুপর্ণা খাটুয়া



Comments

Popular posts from this blog

অনিন্দ্য সরকারের গুচ্ছ কবিতা : গান ছুঁয়ে ছুঁয়ে

অয়ন হালদারের পাঁচটি কবিতা

মুন্নী সেনের গুচ্ছ কবিতা : সম্বোধন