শিরোনামহীন চারটি কবিতা : অয়ন চৌধুরী
শিরোনামহীন চারটি কবিতা
১.
টিভিতে নতুন ফ্লাইওভার উদ্বোধনের
খবর দেখলে বড়ো ভয় করে।
তোমাকে আমার এখানে নিয়ে আসবো
নতজানু বটগাছটির কাছে
দুব্বো ঘাসের আলোয় চড়ুই-এর মধ্যাহ্নভোজনে
বিরহিনী সন্ধ্যার শিহরণে।
এখানে বড়ো বড়ো ফ্লাইওভার নেই
তোমার গায়ে শিশুর গন্ধ কেড়ে নেবার ভয় নেই
তোমার কথার কুঁড়েঘর গিলে ফেলার ভয় নেই
এসো এই সৌহার্দের ঝর্ণার কাছে
বসো আমার পাশে,
এই চিরকালীন স্নেহগন্ধি সাঁকোর উপর।
২.
সেদিন তাকে দেখেছিলাম
অল্প আলোর লুকোচুরিতে, শেষ বিকেলে।
বৃষ্টি ফোঁটার হিম জড়িয়েছিল তাকে,
আমার চোখে বিদ্যুতের ঝলকানি।
তার স্নিগ্ধ হাত আমার কপালে,
শান্ত নদীর মত তাঁর হেঁটে যাওয়া
কোনো এক ভিড়ের সমুদ্রে।
তারপর বহু গল্পের উপকথায় তাকে খুঁজেছি
অনেক ধোঁয়া ধোঁয়া গোধূলির অরণ্যে,
কত রোদ্দুরে ওড়া ফড়িংয়ের ডানায়
কিংবা যুবকের সোনালী ঘুমের নীল স্বপ্নের ওপারে
এই কল্পনায় তার শাড়ি,
আঁচলের গন্ধ লেগে আছে।
তার গল্পের রূপক হয়ে আবার
ফিরে যাই কোনো এক আষাঢ়ের বিকেলে।
৩.
হঠাৎ করে যাবতীয় কবিতা পালিয়ে যেতে চাইলে তাকে টুকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করি
এই রুগ্ন ভালোবাসা ঘুমিয়ে যায় জেগে থাকে অন্তমিলের হলুদ স্নান
বস্তির ক্লান্তিহীন মৃত্তিকায় আষাঢ় নামে,
চেনা শিশুটির বিছানায় বিশ্রাম পাঠিয়ে দিতে পারলেই
ছুটি নেওয়া প্রেমিকা ফিরে আসে অভ্যাসের গ্রন্থিতে।
বাবার অনুরোধ রাখতে রাখতে
ভুলে গিয়েছি স্টেশনের বাচ্চা মেয়েটির শীর্ণ হাতটির কথা।
আর ভুলে গেছি তল্লাট ছাড়িয়ে কোনো এক ভাস্কো ডা গামার বাড়িতে রাখা আছে আমার গীতবিতান।
এভাবেই বেড়ে ওঠে ইউক্যালিপটাস, হৃদকম্পের সাথে সাথে পাহাড় চূড়োয় তৈরি হয় পাঁচতারা হোটেল
শুধু এখানে কেঁপে ওঠা ঝড় মধ্যরাতের সাঁতারে
কিছু শস্যের জন্ম দেয়
৪
স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস জন্মের গায়ে
দাগ রেখে দিয়ে গেছে।
লক্ষ্যহীন ভাবে কিছু কালঘুম জয়ধ্বনি দিয়ে ;
অচেনা দেহ ছেড়ে
ত্রয়োদশীর চাঁদের কারুকার্যে ডুবে থাকে।
হাসপাতালের সামনে ল্যাম্পপোস্টের ঘুম ভাঙেনি।
অশ্রুবিন্দুর হালকা পর্দায়
যেটুকু বেত্রাঘাতের আওয়াজ শুনেছি
শেষ পথচারীর চটির কান্না
মনে হয়েছে পাহাড়ের গা ঘেঁসে তীব্র স্রোতের নদী।
একলা দাঁড়িয়ে থাকা সজীব দেবদারু
ধূমকেতুর অন্ধকারে
অনৈতিক চুম্বন দিয়ে জানান দেয় ,
মৃত প্রেম শহরের মুক্তিপথে
নিরঙ্কুশ স্বাধীনতায় স্নান করে।
অস্ফুটে গোপন সাক্ষাৎ উত্তরসাধনার দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত ..
© অয়ন চৌধুরী
অঙ্কন : ঋতুপর্ণা খাটুয়া
Comments
Post a Comment