জেম সাহার গুচ্ছ কবিতা : পঙ্গু কবিতা
পঙ্গু কবিতা
১
রুটির কাছে নত করি মাথা
কাছে পেতে চাই আর দূরে গ্রামে শুয়ে থাকি
আলাপ মানেই প্রলোভন তাই
কাকতাড়ুয়ার সংলাপ প্রিয় মনে হয়
প্রকৃতি অনেক আগেই ছিন্ন হয়েছে
তাদের মাঝে আচমকাই ভেদক হয়ে শুই
যেভাবে সমস্ত তাপ সংগ্রহ করে শুয়ে থাকে নীল কাক
২
সংকেত বুঝিনি এতদিন প্রলাপে থিতু হই
ব্যবহার ইত্যাদি শরীরের অন্তর্বর্তী মুদ্রায় এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড়ায় না,
যাত্রীদের যতটা হিংসে করি ততই দ্রুত পার হয়ে যায় একের পর এক প্ল্যাটফর্ম
ছোটো শিশু বাটি হাতে আরও দ্রুত এগিয়ে আসে, কামড়ায়
প্রত্যেকটি কামড়ে ক্যানাইন অক্ষর ছেপে যায়।
ছাপাখানার ভূত আমায় সম্পৃক্ত করো
নিরলস যৌনতায়
সংকেত বুঝিনি, বুঝিনি কাকে বলে হিরন্যজল
আমরা কেবল নারী বলতে বুঝি অ্যানাটমি, আরও দ্রুত এগিয়ে যাই মাইন ছড়াতে ছড়াতে...
ফিমারের বাঁক জুড়ে যে জাতীয় সড়ক যায় তার দুপাশে পুঁতে রাখি ডিনামাইট
তুমি এসব গূঢ় সংকেত অবলীলায় পার করে যাও...
আমি জানি অত সহজ নয়।
৩
বিদ্যুতের পরিবাহিতা সবচেয়ে বেশি কবিতায়
আঙুলের নখ উপড়ে ধরেন কবি, টানটান
আর দেখান, জিরাফ ছাড়া কিছুই নেই সেখানে
ধুধু মাঠ - ঘাট - ক্ষেত লেপ্টে এই গবাদি আশ্রয়
ঠাস ঠাস বাজ পড়ে আর প্রেমিকারা বদলে যায় পরিধি বরাবর
চাবুকের শব্দে ঘুমিয়ে থাকেন আপনি
তিনমাসে একবার যান রক্তের ত্রিকোণ সমঝোতায়
একবার চাবুকের শব্দ থেমে যাবে
জানবেন আমিই শুধু জানি হত্যার নৈতিক উপায়
৪
দুপুর বেলায় একটি নীল ঠোঙ্গা পিচের উপর দিয়ে হেঁটে যায়, ওই আমাদের শৈশব, ক্রমশ ট্রাম ডিপোর পাশ দিয়ে, নর্দমায় মিশে যায়।
মেশে না, মিলিয়ে যাওয়া ওর রক্তে নেই। সমস্ত শহরের পাইপলাইন একদিন, সারা সকাল জুড়ে, ওরা জ্যাম করে দেবে। সেই দিন কোনো শুয়োরের বাচ্চাও দশতলার কমোডে স্থির বসে থাকতে পারবে না। এসব কিছুই আসলে হবার নয়। কেননা ঠোঙাই আমাদের একমাত্র শৈশব। আজন্ম ভ্রূণ হয়ে আমরা শুধুই দুপুরবেলায় পিচের রাস্তায় ঘুরে বেড়াই।
৫
একটি অচেনা পাখির সুখ এসে ঘিরে ফেলল এই দুপুরবেলা। প্রথম দৃষ্টিতে বোধ হয়ে ছিল এক জোড়া। পাতার পর্দার বাইরে থেকে , সমস্ত পর্দার বাইরে থেকেই ইঙ্গিত আসে , আসতে শুরু করেছিল , ওইদিন দুপুরবেলা। ভুল ভেঙে যায় যখন একটি উড়ে যায় , তারপর দীর্ঘ সময় দ্বিতীয় কোনো পাখি বেরিয়েই আর আসে না । এ যেন নিজের সাথেই কথা বলা। ওই গাছ , ওই পাখি , ওই দুপুর না থাকলে সামাজিক ভাবে আমাকে পাগল বলা হতো। বেঞ্চ একা শুয়ে থাকে , ট্রেনের জানালা দূরে ঠেলে দিতে দিতে দ্বিতীয় কোনো পাখির কথাই মাথায় আসে না। দুটো দীঘল পুকুর , চারিপাশে জঙ্গলে ভরা। দ্রুত পার হয়ে যায়। দ্বিতীয় পাখিটি বোধ হয় ছিল ওখানে। পর্দার মত সৎ একমাত্র হতে পারে ফেলে আসা হাওয়া ।
© জেম সাহা
অঙ্কন: শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
❤️ জেম
ReplyDeleteসঙ্গে থাকুন। শুভেচ্ছা।
Delete