Posts

Showing posts from June, 2022

প্রীতম কুমার রায়ের গুচ্ছ কবিতা : বাণ মঙ্গল

Image
বাণমঙ্গল ১ ধীরজ হিমের রাতে, প্যাঁচাদের নিরন্ন বিষাদে মাঘীপূর্ণিমার চাঁদ আজ যত অভিমান সাধে ঘুমে দ্রব হয় দেহ, মন তবু জ্বলে ধিকি ধিকি খোলা বাতায়ন পথে ভেসে আসা হাওয়া টুকু লিখি- কান পাতি, শোনা যায়- হাজার হাজার স্রোত আগে এভূমে যে রাজা ছিল, বাণগড় তারই নামে জাগে ইতিহাস পুরাতনী, লোকমুখে বেঁচে থাকে কথা কিছু যদি খাঁটি গুড়, কিছু তবে চিনির জড়তা রাজার সহস্র কর মুছেছিল কৃষ্ণের বাণে প্রেমের সারথি কেন যে অপ্রেমে গেল সেই জানে আমি শুধু হাওয়াদের লিখে রাখি, যেমন রাত্রির বুকে কাঁপে ঝিরিঝির- গাছে গাছ, শরীরে শরীর।  ২ স্মৃতিসিক্ত নিরাকার, পদপৃষ্ট অতীত সাকার রাজধানী কোটিবর্ষ, তীরে পুণ্য পুনর্ভবা যার ত্রিদিক পরিখা ঘেরা, কল্লোলিনী রাখে বাকি দিক এক মহাভারত আদি যেচেছিল নিঝুমের ভিখ রাজা ছিল শিবপ্রিয়, রানী ছিল কালো আর ধলো আজো সপ্রমাণে জাগে দুই দিঘী শান্ত ছলো ছলো রানীরা সুড়ঙ্গ মতে সম্ভ্রম রক্ষা করে করে সেখানে উদিত হত, সূর্য লাজে মুখ নিত ফিরে এমনই অলখ কথা, কল্পগাছ, লোকগান যত জেগে আছে মাটি ছুঁয়ে, কিছু ছায়া, কিছু বা সতত আমি শুধু কাছে যাই, হাত রাখি ইতিহাস পীঠে দেখি যে সহস্রাধার জেগেছে অধম করপুটে! ৩ কোটিবর্ষ থে

মন্দিরা ঘোষের গুচ্ছ কবিতা

Image
আদল ভেঙে যায় ১. রোদ ওঠার আগেই চেপে বসে অসুখ। নিস্তেজ খোঁড়াখুঁড়িতে উঠে আসে ঝিনুকখোলার  শূন্যতা । আধবেলার জ্বর বিলিয়ে দেয় কাঠচাঁপা ।  দুপাশে হাওয়াকল আর মিথ্যেকুচি। কাঠের সিঁড়িতে জলপোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে  থাকে কুসুমঘর। ভিজে দেশলাই একদলা শ্রাবণ  ভাসিয়ে দেয় কাঠিতাপে। ২. প্রেম আর প্রতীকী দিয়ে ঢাকা থাকে সব  সংশয়। তীব্র শিস বুঝিয়ে দেয় নিমজ্জনের সংজ্ঞা। মাত্রাজ্ঞানে থই থই ভুলপর্ব। আদতে মেঘে মেঘে ঘেমো অসুখের ওঠাবসা। বুজরুকি মিশে যায় প্রাত্যহিকে । সংসার মাখা হাতে এঁটো ঘোঁচে না। ৩. জবাব লেখা নেই। মাটিশুদ্ধ উপড়ে নেওয়ার দগদগে ঘায়ে ওপর ওপর ঈশ্বর  আর তক্ষকের শুদ্ধাচার।  সাড়হীন কলেবর। মানস পুড়ে যায়। যা পেরিয়ে  যায়  ফিরে আসায় সে থাকে না আর। আবার অন্য রং। আবার জল মাটি খড়। হাতে তাল তাল অনুশোচনা।  আদল ভেঙে যায়। গরজ গরজ ভেঙেছে কাজল। এবার ধানকলমির গান শুষে নিতে চায় সিঁদুরের পারা। সব জেনে গুল-বদন রক্তে বীজ পুঁতি। স্থল দিই। জল দিই। আকাশ দিই। দহ ফেঁপে ফুলে ওঠে। প্রসবের রাতে চাঁদ মুখ গুঁজে  থাকে টাটানো স্তনের ভাঁজে। নাড়ি ফেটে নক্ষত্র জন্ম। বোঁটা ভেজা হলুদ দুধ। চোখে পরিয়ে দিই প্রদীপের তাপ।কড়ে আঙুল দাঁতে কা

মনোজ দের গুচ্ছ কবিতা : প্রিয় ভুল, তোমাকে

Image
প্রিয় ভুল, তোমাকে ১. এই দোষারোপ ভালো  যেন নিজ হাতে সঞ্জীবনী তুলে আনা তারপর ব্যথার উপর, সমস্ত অবিশ্বাসের উপর মেলে ধরবে তাকে। পেছনে কান্নার লুপ আত্মপক্ষ সমর্থন নয়, তবু শোনো তেমন তো কণ্ঠ নেই আর যাবতীয় ভুল, তোমাকে ধারণ করে শ্যামবর্ণ ছেলে অকস্মাৎ হয়ে উঠবে নীল ২. এতদিন নির্লিপ্ত বাগান বলে যা জেনেছি সমস্তই ভুল। আজ এই মহার্ঘ্য স্বীকার করি অভয়ারণ্য সম্পর্কে তোমার আপত্তি জানি গতকাল জেনেছি, তোমার পোষা বেড়ালের কথা দুঃখ পেয়েছি তোমার অর্কিডের মৃত্যু শুনে কী যেন রেখেছ নতুন বাড়ির নাম? যদিও এসব প্রাসঙ্গিক নয়, তবু বলি ব্যালকনিতে খানিক ফুলেরগুচ্ছ, পোষা বিড়াল, ও বিদেশি কুকুর বড়জোর সামাজিকতা, সহমর্মিতা কখনোই নয়  ৩. অন্ধকারেও ভীষণ শুভ্র দূর থেকে চিনে ফেলি তাই —এইসব দোষ বলে মনে হয় আজকাল বয়ঃসন্ধির ব্রণর মতোই বিব্রত হও আমি সেই জরাসন্ধ ড্রাগ কোনো একদিন মলম ভেবে ভুলবশতঃ জড়িয়েছিলে তুমি ৪. অমঙ্গল বলে সত্যিই কিছু কি নেই ফলের দোকানে দেখা হয়ে যায় তবু নিজেকে আড়াল করো  আর আমি পুজো ভুলে, প্রার্থণাগৃহের কথা ভুলে তোমাকেই ভেবে নিই মুদ্রা দোষ নেই প্রিয়, এতে কোনও দোষ নেই তুমি যাকে দুর্ঘটনা ভাব

শতানীক রায়ের গুচ্ছ কবিতা : কথনবিশ্ব

Image
কথনবিশ্ব ১ এবারও অতিক্রম করব— এই সান্ত্বনাবাক্য কখনো বাণীরূপে চারিদিকে ছড়াতে থাকে। ছবির দিকে তাকিয়ে বিকেলসমষ্টির চিত্র ফোটে। এই তো এবার লম্বা লাফের মধ্যে জীবন পরিব্যাপ্ত হবে। জল-স্থল-অন্তরীক্ষের কবিতা এরকমই হয়। গতকাল কিছু জিজ্ঞাসা ছিল। মানুষ উড়ে বেড়ায় কল্পনাবাক্যে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে। ত্রিভুবনে এমন কথা নেই যে... জোড়গুলো খুলছে, আকাশে বাতাসে কী মধুর খেলা। আধখানা চাঁদ পাহারা দেয়। আধখানা বিচিত্র কারণগুলো ক্রমাগত থাকে।  ২ আমি কবিতা লিখেই উঠে গেছি। পাখি থেকে শব্দে। চিত্র নিজেই কথা বলে। বন্ধুনদী অদ্ভুত শান্ত ছিল। যে-পাহাড় অনেক বছর আগে রেখে এসেছি। তারই গল্প বলি আজ। মৃদু মৃদু জ্বলে পাখি বাতাস আর ওম। আমার পুরোনো কবিতায় এসব কি কখনো আশ্রিত ছিল। কেউ কথা বলে। কেউ বলে না। নদীর জন্য আকুতি তোলা থাকে। কথিত আছে: একসময় গাছও কথা বলত, গাছই নাকি মানুষের বন্ধু হত। গাছের সামনে গিয়ে গল্প শোনানোর ক্রিয়া বিক্রিয়ায় এইভাবে জেগে থাকি আমি। এক পা করে এগোই আর পৃথিবী ছোটো হয়ে আসে।  ৩ কথাগুলো অভিশাপ হিসাবে থাকে। যেখানে শব্দের অস্তিত্ব মনবিহীন। শরীরহীন এই শব্দগুচ্ছলতা। এদিকেই ছিল সেই গ্রাম। মানুষ এখানে আপন

অর্ঘ্যকমল পাত্রের গুচ্ছ কবিতা

Image
ক. কীভাবে যে তোমাদের বোঝাই, চঞ্চল দাস, আসলে ভাস্কো দ্য গামা। তাঁরই পুনর্জন্ম এই চঞ্চল। এমনি এমনি তো আর সে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায় না!  সেই যে সেইবার, আমাকে আর দাদাকে ও চকচকে গোসাপ দেখিয়েছিল, সে তো কম কথা নয়! গোসাপের গায়ে পড়া নরম রোদের অন্ত্যমিল দেখে, তখন, সে বয়সেই বুঝে গিয়েছিলাম— বিষণ্ণ মানুষ কেন বোবা হয়ে যায়...  খ. তারপর একবার সেই যে সর্ট বাউন্ডারি খেলায় পাপাইয়ের একটা বলে পুকুরে ছয় মেরে আউট হয়ে গেলাম, সে কথা ভাবলে এখনও কেমন যেন একটা হয়! আউট হওয়ার মনখারাপ নিয়ে যেই না আমরা সবাই আমাদের একমাত্র বলটিকে খুঁজে আনতে গেলাম, তখনই বামুন পুকুরপাড়ে প্রথম দেখলাম— সোনা ব্যাঙ কেমন ঝাঁপ মারে পুকুরে। দেখলাম অযাচিত কিছু হেরে যাওয়ার মধ্যেও ঘাপটি মেরে থাকা আনন্দের লাফ… গ. এখন তেমন কিছুই হচ্ছে না...শুধু বিকেল নামছে...মাঠ থেকে ফিরে আসছে সব একে-একে...একটা বটগাছ মাঝেমধ্যেই একটা একটা পাতা খসিয়ে ফেলে দিচ্ছে গয়লাপুকুরে...জানান দিচ্ছে জলের জীবন...খুবই ধীরে ধীরে একটা খোলসের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে গোটা গ্রাম...   পাশেই দিল্লিরোডের ধারে হাঁটতে যাচ্ছে, ঘুরতে বেরোচ্ছে শান্ত গ্রামবাসীরা। লরিদের থেকে শিখে নিচ্ছে গ

অগ্নিহোত্রী গুপ্তের গুচ্ছ কবিতা

Image
১. এই ঘর অগোছালো বহুদিন জানো,  তবু কেন আসোনি আগে এমন অভিমানও নেই। কেবল বিছানো আছে, কুয়াশা যেমন ভোরের, সামান্য আতিথ্য আর অপেক্ষা রয়ে যায় যদি,  যা সজ্ঞানে চাইনি ভুলে, বয়ে নিয়ে যায় অমোঘ ঘোরে নদীর ছলে। ৩. সব সাধ ফেলে চলে যাব,  সমস্ত চাওয়া তছনছ করে যাব নিজেই,  তার আগে শুধু দেখে যেতে চাই,  যাওয়ার পথের দিকে আনত দীঠি, ভিজে। ----------------------------------------  যে কবিতা আমি কখনো লিখিনি তারা নষ্ট ভ্রূণের মতো এসে দাঁড়ায়।  ঘুমে এবং আচ্ছন্নতায় আরও কিছু বেলা যায়। ঘরে খেলে ছায়া, বিষাদ আমি তার কাছ ঘেঁষে বসি।   জন্মমুহূর্তে সরে আসি ফের। আজীবন বিষাদ থেকে মুক্তি দেব বলেই তোমায় ধারণ করিনি আমি। ----------------------------------------  তোমার জীবনে আমি জোর করে ঢুকে পড়ে  বোকা হয়ে যাই। যে জীবন চলে গেছে,  তার মতো নরম কিছু গন্ধ  আমায় ঘুমের কাছে নিয়ে চলে।  দেখি যারা যত সহজ ভালোবাসতে জানে  তারা জলের কাছাকাছি গিয়ে বসে। ----------------------------------------  হে গ্রীষ্ম বিকেলের হাওয়া,  আমার ঘরময় ঝুলিয়ে দিয়েছ আত্মহনন প্রবনতা। এ হাওয়ায় যুগল অকারণ হেসে ওঠে,  যেন এই যে জীবন আমি পেলাম, তা আমায় বেঁচে ন

ড. দিলীপ চট্টোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা

Image
মাটিতে বৈদেহী সেদিন গাছের নিচে আমি বৃষ্টিতে ভিজেছি  একটু বজ্রের জন্য একটু মৃত্যুর জন্য  দুহাত পেতে রেখে আমি নতজানু হয়েছি  অচেনা গাছ আমার প্রাণের প্রহরী ছিল!  এখন গর্ভের আঁধার থেকে নিষ্পাপ ভ্রুণ বাইরে বেরিয়ে সে একবিন্দু আলোর জন্য জননীর কাছে এসে তাঁর দুহাত পেতেছে।  কেন বৈদেহী মাটিতে ভ্রুণ কান্না মুছেছে!  প্রেয়সী কি হারিয়ে গেল ক্ষুধিত এ পাষাণে  ভ্রুণ কি পাথরে ফোটাবে ফুল যদি বৃষ্টি ঈশানে। কেন ?  হেলিয়া দুলিয়া  মেয়ে পেখম মেলিয়া  ফুলে  তুলিয়া ফেলিয়া  ভুলে  নূপুর খুলিয়া  সুরে দুপুর ভুলিয়া দূরে মরিয়া পড়িয়া কেন হৃদয় খুঁড়ে   ঠোঁটৈ ঠোঁটে পাশা ঈশ্বর ও জাতিস্মর হাসিমুখে করমর্দন করছে করুক আমি দেখছি না।  কবিতা নীরবতা জন্ম দিচ্ছে দিক আমি শুনছি না।  অন্তরে নারী পোষে বাঈজীবাড়ি  যে মূর্খ বলছে বলুক আমি হাসছি না।   অরণ্যে কি জাতীয়সঙ্গীত নেই আমি প্রশ্ন করছি না।  মহাকর্ষের গর্ভে ঈশ্বর ঘুমে আমি জাগাচ্ছি না।  হাঁটু জলে ডুবে হৃদয় প্রাসাদ বক্ষের কৃষ্ণা তৃষ্ণায় থাক জাতিস্মর পথে পথে  হাজার বছর তীর্থের কাক  দ্রৌপদীকান্না তাঁকে দেব না ভীষ্মে শরশয্যা অর্জুন ছোঁবে না।  নারী শিখবে নিরক্ষর

অনির্বাণ সূর্যকান্তের তিনটি কবিতা

Image
আটপৌরে অব্যয় আমার বোন যখন বিধবা হয় তখন তার বয়স ২৪ , ভাগ্নের বয়স ৬ । বোন জামাইর বয়স ৩২ । হুট করে হার্ট অ্যাটাক । আমার ফরসা বোন, খুব ফরসা। সিঁদুর লাগালে মনে হত সকল অপরাধ জ্যোৎস্না খেয়ে আত্মহত্যা করবে। সিঁদুরে কপালে পৃথিবীর মৌমাছি গন্ধ নকশালের শ্লোগান দিত। ওর কপাল , এটা ডীপ ফ্রিজ নয়। আমি কত কি ভাবি, একটা ভয় তো আমার করেই, সবাই যেভাবে শিখেছে আঘাত করা। আমি মনে হয় ফুড়ুৎ করে পুড়ে যাবো। এতো দূর জলের শব্দ, এই দাঙ্গা, এতো এতো কিশোরীর বেণী । কিশোরীর বেণী জুড়ায় আমার প্রাণ, প্রাণ শব্দের সাথে হাহাকার চলে আসে। এই হাহাকার নির্বাণ বোঝে, বোঝে জাতিস্মরের গুহা, যেখানে সিঁদুর বুদ্ধ জাতকের বনভান্তে । সিঁদুর সিঁদুর ফেরিগান , সিঁদুরের ভেতর কিভাবে থাকে জামাইয়ের প্রাণ সেটা আমি কৃষি করতে করতে বুঝতে চাইতাম। আমার লাঙ্গলের ফলা আঘাত করে পাথরে, পাথরে ফুটে ফুল, ফুলের হৃদয় ছিঁড়ে বের করি কিশোরীর কানের দুল। কপালের যে যৌবন আছে সেই আমি বুঝেছি বোনের সুজলা কপালে সিঁদুর দেখে । সেই সিঁদুর দেখে ওর জামাই গাইতো " রাই জাগো গো..."। কখনো কি দেখেছে কৃষক ঝর্না থেকে পানি উধাও এর চিত্র ? চুলের বেণী জানেনা বেণী ভা